বিগত সরস্বতী বিসর্জনের দিনেই প্রয়াত হয়েছেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। দুর্দান্ত গলার জেরে ‘ভারতের নাইটিঙ্গেল’ উপাধিও পেয়েছেন তিনি। নিজের গানের জাদুতে দশকের পর দশক মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের, আগামীতেও তিনি নিজের গানের মধ্যে দিয়েই অমর হয়ে থাকবেন। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না সুদু গানই নয় একসময় অভিনেত্রী হিসাবেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
লতাজির বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন নাট্যজগতের মানুষ। আর বাবার দৌলতেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। খুব ছোট্ট বয়সেই বাবার সাথে স্টেজে ‘ভাব বাঁধন’ নাটকে ‘লতিকা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অল্প বয়সেই নাট্যমঞ্চে দুর্দান্ত অভিনয় মন কেড়ে নিয়েছিল সকলের। ৫ বছর বয়সেই বাবার সাথে ‘সংগীত নাটক’ এ অভিনয় করেন লতাজি, যেটি ছিল একটি মারাঠি নাটক।
এছাড়াও ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য লতাকে ডেকেছিলেন স্বয়ং বলিউডের অভিনেতা রাজ কাপুর। যদিও সেই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। আসলে অভিনয়ের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না লতাজির। লতাজির বয়স যখন মাত্র ১৩ তখনই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। সেই সময় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মারাঠি ও হিন্দি ছবিতে কাজ করতে হয়েছিল। ১৯৪২ সালে ‘পাহিলি মাঙ্গলা গৌর’ ছবিতে, ১৯৪৩ সালে ‘মাঝে বল’, ‘চিমকুলা সংসার’, ১৯৪৪ সালে ‘গজভাউ’, ১৯৪৫ সালে ‘বাদি মা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়, ১৯৪৬ সালে ‘জীবনযাত্রা’, ১৯৪৮ সালে ‘মান’ ও ১৯৫২ সালে ‘ছত্রপতি শিবাজী’ ছবিতে করেন সুর সম্রাজ্ঞী। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি টান না থাকায় শেষমেশ গান নিয়েই যাত্রা শুরু করেন। নিজের প্রথম গান যখন রেকর্ড করেন তখন পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন মাত্র ২৫ টাকা। এরপর সঙ্গীতের যাত্রা শুরু হয় বলিউড দিয়ে। নিজের গোটা জীবনে ৩৬ টি আঞ্চলিক ভাষায় সহস্রাধিক ছবির জন্য গান গেয়েছেন তিনি। যেটা একটা বিশ্ব রেকর্ড যেটা একমাত্র লতা মঙ্গেশকরই করতে পেরেছেন।
ভারতের জন্য একাধিক দেশাত্মবোধন গান গেয়েছেন তিনি। যার মধ্যে ‘Ae Mere Watan Ke Logon’ গান আজ শিহরণ জাগিয়ে তোলে প্রতিটা ভারতবাসীর মনে। একজন সাধারণ পরিবারের মেয়ে হয়েও নিজের গানের মধ্যে দিয়েই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। হয়তো তিনি আজ আমাদের ছেড়ে সুরের দেশে পারি দিয়েছেন। তবে নিজের সৃষ্টি হাজারো গানের মধ্যে দিয়ে প্রতিটা সঙ্গীতপ্রেমীর মনে আজীবন অমর অক্ষয় থাকবেন তিনি।