রবিবার সকালেই আচমকা থমকে গিয়েছিল ভারতীয় সঙ্গীত জগৎ। দেবী সরস্বতীর বিসর্জনের দিনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। সেই থেকেই কোকিলকন্ঠীর প্রয়াণে শোকে মুহ্যমান গোটা দেশ। প্রসঙ্গত ভারতীয় সঙ্গীত জগতে আজও ডুয়েট গানের সেরা জুটি হিসাবে প্রথমেই আসে লতাজি এবং কিশোর কুমারের নাম।একসাথে গাওয়া তাদের যেকোনো কালজয়ী গানই সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে অমূল্য সম্পদ। একসাথে জুটি বেঁধে একসময় একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের।
তবে প্রথমবার তাদের সাক্ষাৎ পর্ব ছিল দারুন মজার । জানা যায় ১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘জিদ্দি’ ছবির গান রেকর্ডিং করার সময় প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁদের। এ প্রসঙ্গে কিংবদন্তি গায়িকা তাঁর আত্মজীবনী ‘লতা মঙ্গেশকর: ইন হার ওন ভয়েস’ -এ বিস্তারিত জানিয়ে লিখেছিলেন ‘কিশোরকে প্রথমবার দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লেগেছিল। তারপর দেখলাম আমি যে পথে এগোচ্ছি, উনিও সেই পথে এগোচ্ছে। মালাড থেকে টাঙ্গা চেপে বোম্বে টকিজ স্টুডিও যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। উনিও দেখি তাই করল। শেষমেশ স্টুডিওতেও আমার পিছনে ঢুকে পড়ল।’
বিষয়টা মোটেই ভালো লাগছিল না সুর সম্রাজ্ঞীর।তাই এরপরেই তিনি এরপর সংগীত পরিচালক ক্ষেমচন্দ প্রকাশ-কে জানিয়েছিলেন তাঁর একটু অদ্ভুত লাগছে। আর তখনই নাকি তিনি কিশোর-দাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘ ওই ছেলেটি কে? আমাকে অনেকক্ষণ ধরে অনুসরণ করে পিছন পিছন আসছে!’কোকিলকন্ঠীর মুখে কিশোর কুমারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে সেসময় হাসি চাপতে পারেননি স্বয়ং ক্ষেমচন্দ প্রকাশও। এরপরেই হাসি থামিয়ে তিনি কিশোর কুমারের আসল পরিচয় দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে লতা-কিশোর জুটির গান শুধু ভারতেই নয়,পৌঁছে গিয়েছে গোটা বিশ্বের দরবারে। যা আজও সমান জনপ্রিয়। উল্লেখ্য একসময় দূরদর্শনের সুবাদে কিশোর কুমারের একমাত্র দেওয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন স্বয়ং লতাজি। জানা যায় সেসময় প্রতি বছর রাখীবন্ধন উৎসবের দিন লতাজির বাড়িতে যেতেন কিশোর কুমার। তবে জানা যায় একটা সময়ের পর কিশোর কুমারের সঙ্গে গান গাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলে দু’জনেই!
এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত গীতিকার সমীর অঞ্জন ‘দ্য কপিল শর্মা শো-এর অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে এসে বলেছিলেন ‘কিশোরদার উদ্দেশে লতাজি বলেছিলেন, ওঁকে একাই গাইতে দাও। আমি আর গান গাইব না ওঁর সঙ্গে।’ তার কারণ হিসাবে নাকি লতাজি বলেছিলেন ‘গান রেকর্ডিংয়ের আগে কিশোরদা এত গল্প-আড্ডা মারতেন যে তাতে না যোগ দিয়ে থাকতে পারতেন না লতাজি। কথার সঙ্গে ভাগ হতো হাসাহাসিও। শেষমেশ রেকর্ডিংয়ের সময় দেখা যেত লতাজির গলা ব্যাথা করছে কিংবা ক্লান্ত বোধ করছেন তিনি। অন্যদিকে দিব্যি হাসতে, হাসতে নিজের গানের রেকর্ডিং সেরে বেরিয়ে যেতেন কিশোরদা। এই দেখে একটা সময়ের পর লতা মঙ্গেশকর ঠিক করলেন আর কিশোরের সঙ্গে গাইবেন না তিনি।’