গত মাসের শেষ তারিখ অর্থাৎ ৩১-মের রাত আমাদের কলকাতাবাসীর কাছে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ওইদিন কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাইতে এসেছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী কে কে (KK)। প্রত্যেক বারের মতো সেদিনও কনসার্ট শেষে একেবারে নিজস্ব কায়দায় হাত নেড়ে ‘আলবিদা’ জানিয়েছিলেন কেকে। কিন্তু কে জানত, এটাই হতে চলেছে কেকে-র গাওয়া শেষ গানের কনসার্ট!
শো থেকে ফেরার পথেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে অকালেই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন শিল্পী। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত চোখের জল শুকায়নি তাঁর আত্মীয়-স্বজন,পরিবার -পরিজন থেকে শুরু করে ছেলে -মেয়ে এবং স্ত্রীর- কারোরই। KK-কে ভুলতে পারছেন না কেউই। এরই মাঝে এদিন বাবা কে কে-এর উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি হৃদয় নিংড়ানো পোস্ট করেছেন কেকে-র ছেলে নকুল কৃষ্ণ (Nakul Krishna)।
বাবাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা চিঠি পড়তে বসলে চোখের কোণে জল আসবে যে কারও। আসলে শোক বিশেষ করে আপনজনের মৃত্যু শোক এমনই জিনিস যা ভিতর থেকে এতটাই নাড়িয়ে দিয়ে যায় যে মনের মধ্যে হাজার শব্দ ভীড় করে এলেও সেই মুহুর্তে কোনো কিছু বলার বখতিয়ার লেখার অবস্থায় থাকে না অনেকেই। কেকে-র মৃত্যুর পর ঠিক এমনই অবস্থা হয় তাঁর ছেলে নকুলের।
কান্না দলা পাকিয়ে এলেও অবশেষে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছেন নকুল। অবশেষে গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবার সাথে একান্তে কাটানো কিছু না-দেখা মুহূর্ত শেয়ার করে নকুল লিখেছেন অত্যন্ত মর্মস্পর্শী (Heart Touching) একটি খোলা চিঠি। পোস্টের শুরুতে তিনি লিখেছেন ‘তিন সপ্তাহ আগে কী হয়েছে তা বিশ্বাস করতে অনেকটা সময় লেগে গেল। এখনও একটা শারীরিক যন্ত্রণা রয়েছে, মনে হয় এবার হয়তো দমটা বন্ধ হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে কেউ আমার বুকের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।’
সেইসাথে নকুলের আরও সংযোজন ‘আমি কিছু বলতে চাই, আমার বাবার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই, কিন্তু যন্ত্রণায় একেবারে কুঁকড়ে গিয়েছি। আসল কষ্টটা এতদিনে বুঝতে পারলাম।’ সেই সাথে তিনি জানান কে কে-এর মতো একজন কিংবদন্তি শিল্পীর ছেলে হতে পেরে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। কারণ হিসাবে নকুল বলেছেন ‘কত মানুষ তোমাকে একবার দেখতে চেয়েছে, একবার ছুঁতে চেয়েছে। আর আমরা প্রতি মুহূর্তে তোমার ভালোবাসা পেয়েছি।’ তাছাড়া তিনি জানিয়েছেন তার সাথে তার বাবার সম্পর্ক ছিল একেবারে আলাদা একেবারে বন্ধুর মতো।
এই খোলা চিঠির (Open Letter) শেষে খুব সুন্দর করে বাবার প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে নকুল লিখেছেন ‘বাবা, আলোকরেখার ঢেউ আছড়ে পড়ে, আবার তো ঢেউ হয়েও ফিরে আসে। আমি আসব বাবা, যে জায়গায় আবার ঢেউ ফিরবে, সেখানেই ঠিক দেখা হবে আমাদের।’ সেইসাথে বাবাকে প্রকৃতির এক ভীষণ শক্তি বলে উল্লেখ করে নকুল লিখেছেন ‘এই উজ্জ্বল জীবনীশক্তি খুব দ্রুত পুড়ে গেল। আলো হয়ে চলে গেল।’
View this post on Instagram