বলিউডের (Bollywood) নামী গায়ক কৈলাশ খের (Kailash Kher) আজ ৪৯ বছরে পা দিলেন। হিন্দি সিনেমার একাধিক জনপ্রিয় গান গাওয়া এই গায়ক শুধুমাত্র ভারতেই নয়, নিজের সুফি গায়কীর জন্য সমগ্র বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজ নিজের প্রতিভার মাধ্যমে যশ, অর্থ, খ্যাতি- সবকিছুই রয়েছে কৈলাশের কাছে। কিন্তু এমন একটা সময়ও ছিল, যখন এই জনপ্রিয় গায়কই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। নিজের একটি সাক্ষাৎকারেই এই কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এই বিষয়ে বলেছিলেন কৈলাশ। এই ঘটনাটি যখনকার তখন তিনি বলিউডে পা রাখেননি। গায়কের কথায়, ‘আমি একটি ব্যবসার ডিলে প্রচুর টাকা হারিয়েছিলাম এবং আমার সম্পূর্ণ জীবন ওখানে থমকে গিয়েছিল। আমি এক বছর ডিপ্রেশনে ছিলাম এবং যখন কোনও উপায় পাইনি, তখন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। আমি নদীতে ঝাঁপ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধু আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছিল’।
কৈলাশ মাত্র ১৪ বছর বয়সেই নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। সেখানে উনি কিছু ছোটখাটো কাজ করতেন এবং এরপর নিজের ব্যবসা শুরু করেন। এই সময়ে ওনার জীবনে অনেক মুশকিল এসেছিল। কিন্তু উনি দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে কথা বলার সময় বলি পাড়ার এই জনপ্রিয় গায়ক একবার বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে অনেক কঠিন সময় দেখেছি। আমি পুরো একা ছিলাম। আমার সঙ্গে কেউ এমন ছিল না যাকে আমি বলতে পারতাম দেখো আমার জীবনে কী হচ্ছে… কিন্তু আমি নিজের বিষয়ে কখনও এটা ভাবিনি যে ভগবান আমার সঙ্গেই কেন এমন হচ্ছে? বা কবে সব আবার ঠিক হবে। আমি শুধু লড়াই চালিয়ে গিয়েছি’।
কিন্তু কৈলাশের যখন ২৭ বছর বয়স তখন তাঁর জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময় আসে। গায়ক জানান, উনি একটি জমি কিনেছিলেন। ভেবেছিলেন, বিজনেস ডিল থেকে অনেক টাকা আসবে। ওনার মা-বাবা চিরকাল ভাড়া বাড়িতে থেকে এসেছেন, তাই জমি কেনার খবরে প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। উনিও ভেবেছিলেন অবশেষে মা-বাবার জন্য বাড়ি কিনতে পেরেছেন। কিন্তু এসবের মাঝেই লাখ টাকার সেই বিজনেস ডিল বাতিল হয়ে যায়। ২২ লাখ টাকার লোকসান হয়েছিল কৈলাশের। পরিশ্রম করে আয় করা সব টাকা ডুবে গিয়েছিল।
গায়ক বলেন, বিজনেস ডিল অসফল হওয়ার পর তিনি হৃষীকেশ গিয়ে জ্যোতিষবিদ্যা শেখার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেখানেও কোনও লাভ না হওয়ায় উনি ডিপ্রেশনে চলে যান। এরপর একসময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে উনি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কৈলাশ গঙ্গাতে লাফ পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু ওনার এক বন্ধু ভাবেন পা পিছলে হয়তো তিনি পড়ে গিয়েছেন। তাই উনিও গঙ্গায় লাফ মেরে কৈলাশকে তুলে আনেন।
এরপর ২০০১ সালে অতীত ভুলে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন যাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন কৈলাশ। প্রথমে টিভি এবং রেডিওতে জিঙ্গল গাইতেন তিনি। এরপর ‘অন্দাজ’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘রব্বা ইশক না হোবে’ গানটি গান তিনি। তবে ‘ব্যায়সা ভি হোতা হ্যায় পার্ট ২’ ছবির ‘আল্লা কে বন্দে হাস দে’ গানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ১০০০’টিরও বেশি গান গেয়েছেন কৈলাশ, হিন্দির পাশাপাশি মালায়লম, কন্নড়, তেলেগু, তামিল ভাষাতেও গান গেয়েছেন তিনি।