বাংলা বিনোদন জগতের এক অন্যতম পরিচিত নাম হল মিতা চ্যাটার্জী (Mita Chatterjee)। তবে দর্শকদের কাছে তিনি বাংলার কালজয়ী ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি'(Janmabhumi)-র পিসিমা (Pisima) নামেই বেশী সমাদৃত আজও। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীকে শেষবার দেখা গিয়েছিল জি বাংলার ‘ত্রিনয়নী’ সিরিয়ালে তারপর থেকে বিগত প্রায় আড়াই বছর ধরে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের জগত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু কেন? সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারণ জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।
আসলে করোনা সংক্রমণের জন্য বিগত আড়াইবছরের বেশি সময় ধরে নিজেকে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রেখেছেন এই শিল্পী। তবে অভিনয় থেকে দূরে আছেন বলে তিনি যে কাজ করা থামিয়ে দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। বাড়ি বসেই নিভৃতে চলছে বই লেখালেখির কাজ। প্রসঙ্গত বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর অনেক অল্প বয়সেই অভিনয় হাতে ঘড়ি হয়েছিল।
অভিনয় জীবনের প্রথম দিকে তার নাম ছিল নমিতা চাটার্জী। কিন্তু এই একই নামের আরো দুজন নায়িকা থাকায়, তার নামটা একটু ছোট করে মিতা করে দিয়েছিলেন স্বয়ং অনুপ কুমার। জানা যায় ১৯৪৭ সালে শিশু শিল্পী হিসাবে প্রথমবার হেমেন বসু পরিচালিত ‘ভুলি নাই’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন মিতা চ্যাটার্জী। প্রসঙ্গত ১৯৩৬ সালের ২২শে আগস্ট কলকাতা শহরে জন্ম এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর। তাঁর বাবা ফনি ভূষণ চট্টোপাধ্যায় অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া কোর্টে ওকালতি করতেন।
বাবার উৎসাহেই মিতাদেবী গান শিখেছিলেন রাজেন বসুর কাছে আর নাচ শিখেছিলেন শিক্ষক মণি শঙ্কর মহাশয়ের কাছে। অভিনেত্রী হিসাবেই দর্শকমহলে অধিক পরিচিত তিনি। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন নাচ নিয়েই বেশ উন্নতি করেছিলেন এই বর্ষীয়ান শিল্পী। তবে শুধু নাচ গান কিংবা অভিনয় নয় পাশাপাশি পড়াশোনা থেকে শুরু করে খেলাধুলা সব দিক দিয়েই এক কথায় পারদর্শী এই অভিনেত্রী। মিতা চ্যাটার্জি স্বয়ং নিজেই জানিয়েছেন একসময় তিনি টেবিল টেনিস থেকে শুরু করে সাঁতার সবটাই শিখেছেন খুবই মন দিয়ে।
বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি শুধু নয় শিখেছেন নেপালি ভাষাও। তাই শুধু অভিনয় কিংবা শিল্পচর্চায় নয় একইসাথে ঘর থেকে মাঠ সংসার থেকে স্টুডিও সর্বত্রই ছিল তার অবাধ আনাগোনা। জীবনে পাওয়ার তালিকাটা তার অনেকটাইই বেশি। অভিনেত্রীর কথায় জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় কখনোই হননি তিনি। কিন্তু এসবের মধ্যেই তার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা ক্ষতি হয়ে যায় বিয়ের বেশ কিছু বছর পরেই। হঠাৎই একদিন সেলিব্রাল স্ট্রোক হয়ে মারা যান তার স্বামী তথা সরকারি কলেজের অধ্যাপক শ্রী বিমল কুমার চট্টোপাধ্যায়। সে সময় তার কোলে একরত্তি কন্যা সন্তান।
প্রসঙ্গত বিয়ের পর সংসারের জন্যই বহুদিন ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে ছিলেন তিনি। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পরে আবার সুযোগ আসে কাজের। তাই কখনও কোনোদিন কোনো অবস্থাতেই থেমেছিলেন না অভিনেত্রী। জীবনের স্রোতেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে। প্রসঙ্গত দূরদর্শনের ডিডি বাংলায় সবচেয়ে বেশি দিন চলা ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’। এই সিরিয়ালে প্রথমে তিনি ডাক পেয়েছিলেন ৬ দিনের একটা চরিত্রের জন্য। পরবর্তীকালে সেই ছয় দিনে চরিত্র কবে যে ৭ বছর হয়ে যায় তা তিনি জানতে পারেননি নিজেও। অভিনয় করেছেন একাধিক সিনেমায়। মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথেও ‘নবজন্ম’ এবং ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।