একসময় বাংলা ছবির জনপ্রিয় খলনায়িকা ছিলেন অভিনেত্রী গীতা দে (Gita Dey)। তার অভিনয় দেখলে তেলে বেগুনে গা জ্বলে উঠত দর্শকদের। একজন খল নায়িকার কাছে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর কী হতে পারে? তবে পর্দায় তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে তাঁর মমতাময়ী স্বভাবের জন্য তিনি ‘গীতা মা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ডাক্তারের ঘরের মেয়ে হয়েও তাকে ভাগ্যের পরিহাসে অভিনয়ের দিকেই ঝুঁকতে হয়।
১৯৩১ সালের ৫ই অগাস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ কলকাতার দর্জি পাড়ায় জন্ম হয় গীতার। তার পিতা ছিলেন অএশায় একজন ডাক্তার, এবং মা রেণুবালা দেবী সামলাতেন ঘর সংসার। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র ৫ বছর বয়সেই মা বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যেতে দেখেন গীতা দে। এরপর আদালতে ওই বয়সেই বাবা বা মায়ের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলা হয় অভিনেত্রীকে। গীতা দে সেদিন তাঁর মায়ের কাছে থাকবেন বলেই ঠিক করেছিলেন।
সেই সময়ে মা রেনুবালা দেবী তাকে বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন,”কি বোকা রে তুই! ডাক্তার বাবার কাছে থাকলে কত ধনীর দুলালী হতিস। আমি তো তোকে সুখই দিতে পারব না”। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের কারণে বেশি দূর লেখাপড়াও চালাতে পারেননি অভিনেত্রী। এমনকি মা দ্বিতীয় বিয়ে করলেও, তাঁর সৎবাবা তাদের দায়িত্ব নেননি।
বরং সৎ বাবার জোরাজুরিতেই গীতা দে অভিনয় জগতে পা রাখেন। মাত্র ৬ বছর বয়সেই অভিনেত্রী সংসার চালানোর জন্য থিয়েটারে কাজ করতে নামলেন। এরপর তাদের পরিচিত তৎকালীন বিখ্যাত গায়িকা রাধারানী দেবীর আনুকূল্যে গীতার জায়গা হল প্রবোধ গুহর মঞ্চে। তৎকালীন বেতন মাত্র পাঁচ টাকা। এরপর একে একে বেশ জনপ্রিয় থিয়েটার নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৪৫ সালে মা হারা হন গীতা৷ এরপর সম্পর্কে গীতা দের মায়ের মতো বন্দনা দেবীর দৌলতে পরিচয় অভিনেত্রীর পরিচয় হয় শিশির ভাদুড়ীর সাথে। তবে সেখানে কাজ পেলেও বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছিল তাকে। এরপর অভিনেত্রীর বিয়ে হয়। কিন্তু অভিনয় করতেন বলে শাশুড়ির মোটেই পছন্দ ছিল না তাকে। তাই ছেলেকে দিন কয়েকের মধ্যেই অন্যত্র বিয়ে দেন অভিনেত্রীর শাশুড়ি। তখনও তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়নি। তবু জীবনের শেষ দিন অবধি স্বামীর পদবী এবং সিঁদূর নিজের সাথে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পর প্রায় রাস্তায় বসে গিয়েছিলেন তিনি।
অভিনয় দক্ষতা এতটাই ভাল ছিল তার, তার সম্বন্ধে বিদেশি এক পরিচালক বলেছিলেন, “ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্মালে তাহলে অবশ্যই অস্কার পেতেন।” কিন্তু এত ভালো অভিনেত্রীও আজ বিস্মৃতির অতলে। বেঁচে থাকতে যোগ্য সম্মানটুকুও পাননি তিনি।