মৌলবাদীদের আক্রমণে তার দেশে ফেরা হয়না। কিন্তু বাংলা ভাষায় কবিতা থেকে মতবাদ কিছুই তিনি বাদ দেননা। তার কবিতায় যেমন উঠে আসে সমাজের একেবারে লুকিয়ে থাকা দিক, তেমনই তার প্রতিবাদী লেখা থেকে ফুটে ওঠে তার প্রগতিশীল চিন্তাধারা। কিন্তু কোন কোন সময় তার এই চিন্তা ভাবনা একেবারে রোশের মুখে পড়ে। তাও তিনি নিজের চিন্তাকে প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন না। তিনি বাংলাদেশের নাড়িবাদী প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।
বিতর্ক যেন এই কবির পিছু ছাড়ে না। এ বার নেটমাধ্যমে তাঁর করা একটি পোস্ট নিয়ে উঠল ‘বডি শেমিং’-এর অভিযোগ। অন্যদিকে তার পোস্টের প্রত্যুত্তরে উঠে এসেছে নেটিজেনদের তীব্র প্রতিক্রিয়া। অন্যের শরীরের আকৃতি নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করার কোনও অধিকার তাঁর নেই, বলেই জানিয়ে দিলেন নেটাগরিকরা। তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) কিছুদিন আগেই যৌনতার ব্যাখ্যা করেছিলেন। সরাসরি তিনি নিজের যৌনজীবনের উদ্দামতার কথা লিখেছিলেন। তাঁর মতে, বর্তমানে যৌনতা যান্ত্রিক হয়ে গেছে। এবার তসলিমা নারী-পুরুষের পোশাক নিয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করলেন।
প্যারিসের ফ্যাশন মঞ্চ থেকে আমার-আপনার অন্দরমহল, তারকা থেকে সাধারণ মানুষ… কাউকেই স ছাড়ছে না ‘বডি শেমিং’ এর মত মানসিক ও সাংস্কৃতিক মহামারি। শরীর সংক্রান্ত মন্তব্য করে অন্যকে হীনমন্যতায় ভোগানোই হল ‘বডি শেমিং’। নেটমাধ্যমে এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। অন্যের দৈহিক আকার, বর্ণ, সাজসজ্জা, অঙ্গের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ঠাট্টার ছলে হুল ফুটিয়ে মজা নেন অনেকে। তসলিমাও কি সেই তালিকায় নাম লেখালেন?
ফেসবুকের একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সুগোল সুডোল ফার্ম স্তন দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। মেয়েরা স্তন দেখানো, ক্লিভেজ দেখানো জামা পরলে বেশ লাগে দেখতে। সুদর্শন পুরুষদের যেমন শর্টস পরলে বা সুঠাম বাইসেপ দেখানো স্লিভলেস টিশার্ট, বুকের লোম দেখানো ডীপ ভি নেক টিশার্ট পরলে দেখতে ভাল লাগে, তেমন মেয়েদের কিছুটা নিতম্ব ঝিলিক দেওয়া সুগঠিত পা দেখানো মিনি শর্টস পরলে, ক্লিভেজ বা অর্ধেক স্তন দেখানো, পেট এবং নাভি দেখানো ছোট টপ পরলে দেখতে বেশ লাগে’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘সমুদ্রতীরে, বা লেকের পাড়ে রোদ্রস্নান করতে থাকা সুইমিং কস্টিউম পরা ছেলে আর বিকিনি পরা মেয়ে দেখলে চোখের আরাম হয়। কিছুই না পরা ছেলেমেয়ে দেখলে তো মনের আরও আরাম হয়। মানুষ যে প্রকৃতির সন্তান, তা তো নগরীর কোলাহলে অনেকটা ভুলতে বসেছি’।
তসলিমার এই ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উঠেছে দীর্ঘায়িত সওয়াল। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটাগরিকরা। তসলিমার লেখার নীচে একজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যা বললেন, তা বডি শেমিং এর পর্যায়ে পড়ে। এমন কি যে বর্ণনায় আপনার কাছে সৌন্দর্য, সেগুলো তাঁদের না থাকলেও তাঁদের কাছে সেগুলো সৌন্দর্যপূর্ণ। তাঁদের সেগুলো শেয়ার করার আনন্দে আপনি চোখ ফিরিয়ে নিতে পারেন, সেটি প্রকাশ্যে লিখলে তাঁরা যে অপমানিত হয়, সে সংবেদনশীলতা আমাদের অবশ্যই থাকতে হবে’।তসলিমা কিন্তু বলেছেন, কে কী পরবে, তা নির্ধারণ করার তিনি কেউ-ই নন। সেই অধিকারও তাঁর নেই। তাঁর কি দেখতে ভাল লাগে তিনি সেটাই ব্যক্ত করেছেন মাত্র! তবে এক জন লেখিকার কাছে এমন মন্তব্য কি আশা করা যায়, সেই প্রশ্নই তুলছে নেটদুনিয়া!