লকডাউনের জেরে টেলিপাড়ায় বন্ধ শুটিং। তাই আপাতত বাড়ি থেকেই সারতে হচ্ছে শুটিং পর্ব। মাঝে টেকনিশিয়ানদের ফেডারেশন ও আর্টিস্ট ফোরাম তথা সিরিয়ালের প্রজকদের মধ্যে বেশ বিতর্ক হয়েছে। লুকিয়ে জমায়েত করে শুটিংয়ের মত অভিযোগ উঠেছে। তবে সিরিয়ালের সম্প্রচার চালানো অব্যাহত রাখতে আপাতত ওয়ার্ক ফ্রম হোম (Work From Home) চলছে পুরোদস্তুরে।
মিঠাই থেকে শুরু করে খড়কুটো, কৃষ্ণকলি থেকে দেশের মাটি সমস্ত সিরিয়ালেরই ব্যাঙ্কিং করে রাখা পর্ব শেষ। তাই বাড়ি থেকেই শুটিং সারছেন কলাকুশলীরা। এরপর ভিডিও পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রোডাকশন হাউসে তারপর সমস্ত ভিডিও জুড়ে তৈরী হচ্ছে সিরিয়ালের নতুন এপিসোড। এতো গেল শোনা কথা কিন্তু এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুটিংয়ের বিষয়ে কি বলছেন সিরিয়ালের অভিনেতা অভিনেত্রীরা? এবার সেই উত্তর নিয়েই হাজির বংট্রেন্ড।
প্রথমেই আসি বর্তমানে বাঙালির সবচাইতে পছন্দের সিরিয়াল ‘মিঠাই (Mithai)’ এ। মিঠাই সিরিয়ালে অভিনয় করছেন অভিনেতা সৌরভ চ্যাটার্জী (Sourav Chatterjee)। তিনি নিজের বাড়ি থেকেই শুটিং করছেন, আর বাড়ি থেকে শুটিয়ের অনুভূতি শেয়ার করেছেন অভিনেতা। তার মতে, ‘বাড়ি থেকে শুটিং করে টেকনিশিয়ানদের গুরুত্বটা বুঝতে পারছি বেশ। স্টুডিওতে প্রফেশনাল লাইট থেকে ক্যামেরা ম্যান সাউন্ড ও আর্ট ডিরেক্টরের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তিনি। তবে এটাই এখন নিউ নর্মাল তাই কাজ চলছে এভাবেই’।
মিঠাই সিরিয়ালে কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছে রাতুল ও শ্রীতমার। দুজনের কথোপকথনের দৃশ্যে পার্থক্য চোখে পড়ার মত। আসলে দুজনের বাড়ির দৃশ্য আলাদা তাছাড়া লাইটের সমস্যা ও নিজেদের উচ্চতা অনুযায়ী ক্যামেরা সেট করে অভিনয় এসব মিলে যথেষ্ট খাটনি বেড়েছে দুজনেরই।
জনপ্রিয়তার কথা বলতে গেলে খড়কুটো (Khorkuto) সিরিয়ালের কথা বলতেই হয়। সিরিয়ালে সৌজন্যের চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা কৌশিক রায় (kaushik Roy)। তার মতে এইভাবে কাজ করতে আমরা কেউই অভ্যস্ত নই। যার ফলে সমস্যা তো হবেই। সিরিয়ালে সৌজন্যের দৃশ্যে লাইটের কিছুটা অভাব বোঝা যাচ্ছে পর্দায়। তবে সিরিয়ালের নতুন পর্বের সম্প্রচার অব্যাহত রাখতে এভাবেই কাজ চালাতে হবে।
এবার আসা যাক দেশের মাটি (Desher Mati) সিরিয়ালের কথায়। সম্প্রতি সিরিয়ালের রাজা-মাম্পি জুটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে আকাশছোঁয়া। সিরিয়ালে ডোডোর চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা তথাগত মুখার্জী (Tatahagata Mukherjee)। বর্তমানে বাকিদের মত বাড়ি থেকেই শুটিং করতে হচ্ছে তাকেও। স্টুডিওতে অভিনয়ে অনেক সুবিধা হত সেটা স্বীকার করেছন তিনিও। কারণ কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সেটা তৎক্ষণাৎ পাওয়া যেত বা কেউ দিয়ে যেত। সেটা বাড়িতে হচ্ছে না সবসময়।
যদিও তথাগত নিজেও একজন পরিচালক তাই খুব বেশি অসুবিধায় পড়তে হয়নি তাকে। তাছাড়া বাড়িতে স্ত্রী দেবলীনা রয়েছে তাকে সাহায্যের জন্য। সিরিয়ালের কোনো দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য কিছু প্রয়োজন হলে হাতের কাছে এনে দিচ্ছেন তিনি। তবে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে নিজেকেই সামলাতে হচ্ছে তাকেও।
বাংলা সিরিয়ালের মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় সিরিয়াল হল কৃষ্ণকলি (Krishnakoli)। সিরিয়ালে শ্যামা তার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে একত্রে পরিবার হিসাবে দেখানো যাচ্ছে না। সিরিয়ালের ‘শ্যামা’ অভিনেত্রী তিয়াশা রায় (Tiasha Roy) বর্তমানে কলকাতাতেই রয়েছেন। কলকাতার ফ্ল্যাটে একই থাকছেন কাজের সূত্রে।
অভিনেত্রীর মতে বাড়িতে সিরিয়ালের জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেস পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো কেচে সানিতাইজ করে তবেই পড়ছেন ও অভিনয় করছেন। কিন্তু মুশকিল হল ষ্টুডিওতে ক্যামেরা লাইট সেট করার লোক থাকলেও বাড়িতে সেসব হচ্ছে না। তাই শুটিংয়ের মধ্যেই চলছে ক্যামেরা সেট থেকে শুরু করে লাইট অ্যাডজাজমেন্ট।
‘কি করে বলবো তোমায় (Ki Kore Bolbo Tomai)’ সিরিয়ালের রাধিকা অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্তেরও (Swastika Dutta) অবস্থা খুবই করুণ। অভিনেত্রীর মতে নিজেই ক্যামেরা সেট করছি নিজেই সংলাপ বলছি নিজেই কেউ দিচ্ছি। সব একাকী সামলাতে হচ্ছে। তার ওপরে সাউন্ড আর আলোর সমস্যা তো রয়েছেই। বাড়ি থেকে কাজের চাপ যেন আর নেওয়াই যাচ্ছে না! অভিনেত্রী যে বাড়ি থেকে শুটিংয়ে যে হিমশিম খাচ্ছে সেটা একেবারেই স্পষ্ট।