টলিউডের ‘মহানায়ক’ বলে কথা। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখনও উত্তম কুমারকে (Uttam Kumar) নিয়ে সংবাদমাধ্যমে চর্চা লেগেই থাকে। একসময় টলি সুপারস্টারের সঙ্গে ডিভোর্সী সুপ্রিয়া দেবীর (Supriya Devi) সম্পর্ক নিয়ে প্রচুর জলঘোলা হয়েছে। ‘মহানায়ক’এর সঙ্গে সম্পর্কের থাকার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত অভিনেত্রীকে শুনতে হয়েছে প্রচুর কটু কথা। সেই জিনিসের আঁচ এসে পড়েছিল তাঁদের মেয়ে সোমা চ্যাটার্জির (Soma Chatterjee) ওপরেও।
সোমা উত্তম কুমারের দত্তক কন্যা। সুপ্রিয়া দেবী এবং বিশ্বনাথ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে তিনি। তবে ‘বাবা’ হিসেবে তিনি বরাবর চিনে এসেছেন কিংবদন্তি অভিনেতাকেই। সাংসারিক বিবাদের কারণে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর সোমার নামের পাশে বসেছিল উত্তম কুমারের ‘চ্যাটার্জি’ পদবী। শোনা যায়, ‘মহানায়ক’ তাঁকে দত্তকও নিয়েছিলেন। কিন্তু দত্তক কন্যার স্বীকৃতি দিয়ে যেতে পারেননি।
আসলে ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, কোনও বিবাহিত পুরুষ সন্তান দত্তক নিতে চাইলে তাঁর স্ত্রীয়ের অনুমতি থাকা বাধ্যতামূলক।শোনা যায়, উত্তম কুমার সোমাকে দত্তক নিতে চাইলে তাঁর স্ত্রী গৌরী দেবী রাজি হননি। আর সেই জন্যই অভিনেতার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে দত্তক কন্যার বিষয়টিকে ‘অবৈধ’ হিসেবে ধরা হয়। যদিও সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও বাবার ভালোবাসা থেকে কোনোদিন বঞ্চিত থাকেননি সোমা। ‘মহানায়ক’এর ছেলে গৌতমের মতোই সেও তাঁকে ডাকত ‘বাবি’ বলেই।
শোনা যায়, উত্তম কুমারের সঙ্গে প্রথম আলাপ যখন সেই সময় সোমা অনেক ছোট। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অভিনেতার প্রতি আলাদা একটা অধিকারবোধ জন্মেছিল তাঁর। এমনকি মা সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেও যদি ‘বাবি’ বেশি গল্প করত তাহলে হিংসা হতো সোমার। যদিও কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেই হিংসা বদলে জন্ম নেয় গর্ববোধ।
মেয়ে সোমার চোখে তাঁর ‘বাবি’ হ্যান্ডসাম না, বরং ছিলেন প্রচণ্ড অ্যাট্রাক্টিভ। উত্তম কুমারকে দিলীপ কুমারের সমতুল্যই মনে হতো তাঁর। তবে একসময় বাবা-মেয়ের এই মিষ্টি সম্পর্ককেও নোংরা চোখে দেখেছে এই সমাজ। স্বাভাবিকভাবেই তাতেই কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। ‘বাবি’ তাঁর কাছে বন্ধুর মতো ছিল, তাঁদের খোলামেলা সম্পর্ক নিয়েও রটেছিল কুৎসা।
সোমার বিয়ের সময় বাবার মতোই তাঁর সম্প্রদান করেছিলেন উত্তম কুমার। প্রিয় মেয়ের বৈবাহিক জীবন খুব সুখের না হওয়ায় চিন্তায় থাকতেন তিনি। শেষদিন পর্যন্ত চাইতেন মেয়ে আবার জামাইয়ের কাছে ফিরে যাক। প্রসঙ্গত, সোমার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর ছেলে শন ব্যানার্জি বাংলা টেলিভিশনের চেনা মুখ। ‘মন ফাগুন’এর ঋষি হিসেবে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
সোমা নিজেও বিনোদন দুনিয়ার মানুষ ছিলেন। ‘বংশী রাজ’ এবং ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। উত্তম কুমারের ইচ্ছা ছিল মেয়ে সোমা এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করার। তবে অভিনেতার অকাল প্রয়াণের কারণে অপূর্ণই থেকে যায় সেই ইচ্ছা। আজ উত্তম কুমার-সুপ্রিয়া দেবী দু’জনেই চলে গিয়েছেন। দুই সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখে সংসার করছেন সোমা।