আচমকাই না ফেরার দেশে চলে গেলেন টলিউড খ্যাত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায় ( Abhishek Chatterjee )। তাঁর মৃত্যু সংবাদ যেন এক প্রকার নাড়িয়ে দিল বাংলার সিনে পাড়াকে। একটি রিয়েলিটি শো-এর শুটিং সেটেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সেখান থেকে কোনও মতে বাড়িতে ফেরেন তিনি। বাড়িতেই স্যালাইনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
অভিষেকের মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যে শোকের ছায়া সিনে পাড়া জুড়ে। বুম্বাদা থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণা অভিষেকের মৃত্যুতে বিধ্বস্ত সকলেই। এদিন তাঁর মৃত্যুতে শোকাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তচন ঘোষও ( Tochon Ghosh )। সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন বন্ধুর সঙ্গে কাটানো সকল স্মৃতি গুলি। তুলে ধরেন সেই বছর চল্লিশ আগের কথা গুলি। তুলে ধরেন বন্ধুর সঙ্গে আলাপের প্রথম দিনের কথা গুলি। এদিন তিনি বলেন, “বোধহয় বছর চল্লিশ তো হবেই। এত দিনই চিনি মিঠুকে। আজকের কথা! এখন মনেও পড়ে না, ওর সঙ্গে প্রথম বার কীভাবে আলাপ হয়েছিল। এটুকু মনে পড়ে, আলাপের পর থেকেই মনে হত, ও যেন কত দিনের বন্ধু!” তাঁর মুখে কখনও যে কষ্ট দেখেননি বলেও জানান তচন বাবু ( Tochon Ghosh )। এদিন তিনি বলেন, “কখনওই ওকে গোমড়া মুখ করে থাকতে দেখিনি।” এদিন নিজের এক পুরানো অভি়জ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন,’ বহু বহু বছর আগের কথা। তখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মিঠু এই ওঁদের প্রজন্মটা একেবারে সাফল্যের শীর্ষে। সেই সময়রেই এক কথা। এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বনগাঁয়। অনুষ্ঠানের প্রধান তারকা ছিলেন তিন জন। মিঠু, ঋতুপর্ণা আর অনুরাধা পড়ওয়াল।
স্বভাবতই, অনুরাধাজি বাইরে থেকে এসেছেন। আবার গান গেয়ে চলে যাবেন। নির্দিষ্ট সময়ে বনগাঁয় পৌঁছে গিয়েছিলেন অনুরাধাজী। পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিষেকও। কিন্তু কোনও একটি কারণে ঋতুপর্ণা আটকে পরেছিল। বনগাঁয় অনুরাধাজির গান শেষ। তখনও ঋতুপর্ণা কলকাতাতেই এসে পৌঁছোয়নি। তজনবাবুর আজও মনে আছে, সেই দিনটার কথা। ফোনে তিনি মিঠুকে বলেছিলেন, ‘অনেক দেরি হবে। তুই সামলাতে পারবি?’
অভিষেক নাকি উত্তর করেছিলেন, ‘চিন্তা কোরো না, তুমি ওকে নিয়ে এসো। আমি দর্শকদের নিরাশ হতে দেব না।’
ঋতুপর্ণা দমদম পৌঁছাতেই তজনবাবু ওকে নিয়ে গাড়ি করে বনগাঁর উদ্দেশে রওনা দেন। কত ঘণ্টা লেগেছিল, তা তাঁর মনে নেই। কিন্তু ততক্ষণ মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিলেন মিঠু। উদ্যোক্তাদের কেউ কোনও অভিযোগ করতে পারেননি। এমনই ছিলেন অভিষেক। অন্যদের জন্য এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেটে যেতে পারতেন। কাউকে বুঝতে দিতেন না। হাসিও মিলিয়ে যেত না।
সহকর্মী থেকে অনেক বেশি করে অভিষেক হয়ে গিয়েছিলেন, তজনের বাড়ির মানুষ, পরিবারের মানুষ। তজনের বাড়ির কোনও অনুষ্ঠান অভিষেককে ছাড়া হত না। আজ সে সবই ইতিহাস। তজনের বাড়ির সব ভালো মুহূর্তগুলি থেকে একটি মানুষ পাকাপাকি চলে গেল। একদিন যে মানুষটা অন্য শিল্পীদের বাঁচাতে মঞ্চে একা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারফর্ম করে যেত, জীবনের মঞ্চে আর তাকে কেউ কখনও দেখতে পাবেন না।