সুন্দর ঘন চুল কে না চায়! নারী হোক বা পুরুষ সকলেই চান যে তাদের একমাথা ঘন কালো চুল থাকবে। কিন্তু দিনে দিনে দূষণ আর আরো নানান সমস্যার কারণে পুরুষ থেকে শুরু করে মহিলা প্রায় সকলেই চুলের নানান সমস্যায় (Hair Problems) ভুগছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো কিশোর বয়সেই নারী পুরুষেরা অকালে চুল পেকে যাওয়ার, চুল পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অতিরিক্ত খুশকি (Dandruff) এর মত সমস্যায় ভোগেন। আসুন আজ দেখে নেওয়া যাক চুলের খুশকি দূর করার উপায়গুলি।
খুশকি কম বেশি সকলের মাথাতেই হয়ে থাকে। খুশকি হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তবে খুশকির পরিমাণ যখন অত্যাধিক পরিমাণ বেড়ে যায় তখনি তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আগে কার দিনে মানুষের এতো চুলের সমস্যা ছিল না। অনেকেই বলবেন হয়তো তারা বিশুদ্ধ জিনিস ব্যহাবহার করতেন। অনেকে বলবেন যে সে সময় এতো দূষণ ছিল না। তবে জানেন কি পুরোনো দিনের ঠাকুমা দিদিমাদের কিছু ঘরোয়া টোটকা মেনে চললে আজকের দিনেও চুলের খুশকি দূর করতে ম্যাজিকের মত সমাধান পাওয়া সম্ভব! আসুন আজ বংট্রেন্ডে (Bongtrend) আপনাদের ঠাকুমা দিদিমাদের সেই টোটকাগুলি সন্মন্ধে জানাবো। যার সাহায্যে খুব সহজেই চুলের খুশকির হাত থেকে নিস্তার পেতে পারেন।
১. নারকেল তেল (Coconut Oil)
চুলের যত্নের জন্য নারকেল তেল খুবই উপকারী। অনেকেই নারকেল তেল ব্যবহার করেন। চুলের খুশকি দূর করার উপায় হিসাবে নারকেল তেল একটি দারুন অপশন হতে পারে।
উপকরণঃ
- নারকেল তেল
পদ্ধতিঃ
- স্নান করতে যাবার আগে ভালো করে নারকেল তেল মাখা অভ্যাস করুন। আর মাখার আগে যদি নারকেল তেল একটু গরম করে নিতে পারেন তাহলে তো আরও ভালো।
- বা রাতে শুতে যাবার আগেও এই ভাবে নারকেল তেল দিয়ে চুলে ম্যাসাজ করে শুয়ে পড়তে পারেন।
- এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
এই ভাবে যদি কিছুদিন নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন তাহলেই ফলাফল পাবেন। আর যদি রোজ নারকেল তেল মাখতে পারেন তাহলে খুবই বলেও হয়।
২. অ্যালোভেরা (Aloevera)
চুলের খুশকি দূর করার উপায় হিসাবে অনেকেই অ্যালোভেরা ব্যবহার করেন। আর অ্যালোভেরা ব্যবহার করে সত্যি ম্যাজিকের মত কাজ হয় খুশকির সমস্যায়।
উপকরণঃ
- অ্যালোভেরা জেল পরিমান মত।
- এক চামচ মধু।
পদ্ধতিঃ
- ২ চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে এক চামচ মত মধু মিশিয়ে নিতে হবে।
- এরপর সেটা ভালোভাবে মাথায় লাগিয়ে নিতে হবে।
- ৩০ মিনিট রাখার পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
এই পদ্ধতিতে সম্পাহে ২-৩ বার অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই খুশকির সমস্যা দূর হবে অনেকটা।
৩. লেবুর রস (Lemon )
লেবু হল এমন একটা জিনিস যেটা বহু কাজেই ব্যবহার হয়। আর চুলের জন্য কিন্তু লেবু দুর্দান্ত কাজ করে। আসুন দেখে নি কিভাবে চুলের খুশকি দূর করার উপায়গুলির মধ্যে পাতি লেবুর ব্যবহারও বেশ প্রচলিত।
উপকরণঃ
- পাতিলেবু
- নারকেল তেল
পদ্ধতিঃ
- কিছু পাতিলেবু নিয়ে তা থেকে রস বের করে নিতে হবে।
- এরপর ৩ চামচ মত পাতিলেবুর রসের মধ্যে কয়েকফোঁটা নারকেল তেল যোগ করতে হবে।
- মিশ্রণটিকে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে, এরপর সেটাকে স্নানের এক ঘন্টা আগে চুলে ব্যবহার করতে হবে।
- এরপর স্নানের সময় শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এই ভাবে কিছুদিন করার পরেই আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন। তবে, এটি প্রতিদিন করার দরকার নেই। মাঝে মধ্যে ১ বা ২ দিনের গ্যাপ দিতে পারেন।
৪. টক দই (Yogurt)
দই সাধারণত খাওয়ার জন্য ব্যবহার হয়। তবে এই দই এর রয়েছে অসাধারণ সব গুণ। আজ আপনাদের বলবো কিভাবে চুলের খুশকি দূর করতে টক দই ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকরণঃ
- টক দই
পদ্ধতিঃ
- ৪-৫ চামচ মত টক দই নিয়ে তা ভালো করে ফেটিয়ে নিন।
- এরপর সেই দই মাথার তালুতে বা স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
- এবার এটাকে শুকানোর জন্য কিছুটা সময় দিন। ও শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
এই ভাবে টক দই ব্যবহার করেও খুশকির থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। তবে, এই পদ্ধতি বেশিবার না করলেও চলে। মাসে এক দু বার করলেই সুফল মিলবে।
৫. নিমের রস (Neem)
নিম প্রচুর উপকারী একটি গাছ। নিমের উপকারিতার শেষ নেই, আজ আমরা জন্য কিভাবে নিমের সাহায্যে চুলের খুশকি দূর করতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার।
উপকরণঃ
- বেশ খানিকটা নিম পাতা
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে নিমপাতাকে জলের মধ্যে ফেলে বেশ করে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- এরপর সেদ্ধ নিমপাতা বেটে বা থেঁতো করে তার থেকে রস বের করে নিতে হবে।
- এই নিমপাতার রস মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ এর মত ডাইরেক্ট ব্যবহার করতে হবে।
এভাবে নিমের রস ব্যবহার করলে দারুন সুফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি বাজারে পাওয়া যায় এমন নিমতেল ও ব্যবহার করতে পারেন। আর চাইলে আপনি শ্যাম্পু নাও করতে পারেন।
৬. কমলালেবুর খোসা (Orange Peel)
সাধারণত শীতকালে কমলালেবু খুব সহজলভ্য। আর কমলালেবু যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি এর খোসার রয়েছে দুর্দান্ত সমস্ত উপকারিতা। চুলের খুশকির দূর করার জন্যও কমলালেবুর খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকরণঃ
- কমলালেবুর খোসা
- অল্প পরিমান লেবুর রস
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে সেগুলিকে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে।
- এরপর টুকরো করা কমলালেবুর খোসার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সেটাকে বেটে নিতে হবে ভালো করে।
- তারপর যে মিশ্রণটি রইল সেটিকে চুলে ব্যবহার করতে হবে।
- সবশেষে ১৫-২০ মিনিট মত রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
এই ভাবে মাসে এক বা দু বার করলেই খুশকির থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
৭. ডিমের কুসুম (Egg Yolk)
অনেকেই কাঁচা ডিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু চুলের খুশকি দূর করার উপায় হিসাবে ডিম ব্যাপক উপকারী।
উপকরণঃ
- ডিমের কুসুম
পদ্ধতিঃ
- ২টি ডিমের কুসুম নিয়ে তা ভালফাবে ফেটিয়ে চুলে মেখে কিছুক্ষন রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে চুল যেন শুকনো থাকে এটি মাখার আগে।
- এরপর ৪৫-৬০ মিনিট মত রক্ষার পর চুল শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
এভাবে ডিমের কুসুম ব্যবহার করলেই খুশকি বিদায় নেবে আপনার মাথা থেকে। প্রতিদিন না করলেও হবে সপ্তাহে ২-৩ দিন করলেও ভালো ফল মিলবে।
৮. তুলসী পাতা (Tulsi)
তুলসী গাছ আমাদের আশেপাশে সর্বত্রই রয়েছে। তবে তুলসী গাছের প্রচুর ঔষধি গুণাবলী রয়েছে। আর মাথার খুশকি দূর করতেও দারুন উপকারী তুলসী।
উপকরণঃ
- কিছু পরিমাণ তুলসী পাতা
- আমলা চূর্ন বা আমলা পাওডার
পদ্ধতিঃ
- তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে সেটাকে বেটে নিতে হবে।
- এরপর তুলসী পাতা বাটার সাথে আমলা চূর্ন বা পাওডার মিশিয়ে দিতে হবে।
- এই মিশ্রণটিকে চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করে ২০-৩০ মিনিট রাখতে হবে।
- এরপর শ্যাম্পু করে ভালো করে দিয়ে নিতে হবে।
এইভাবে সপ্তাহে দু দিনও যদি করা যায় তাহলে খুশকি দূর হবেই হবে। আর আমলা থাকার জন্য খুশকি দূর হবার সাথে সাথে চুলের পুষ্টি হবে।
৯. মেহেন্দি (Mehendi)
মেহেন্দি গাছেরও অনেক গুনাগুন রয়েছে। এমনকি বাজারে যে সমস্ত মেহেন্দি পাওডার পাওয়া যায় তা দিয়েও চুলের খুশকি দূর করতেও বেশ ভালো কাজ করে এই মেহেন্দি।
উপকরণঃ
- মেহেন্দি পাওডার
- পাতিলেবুর রস
পদ্ধতিঃ
- পরিমান মত মেহেন্দি পাওডার নিয়ে তা একটি পাত্রে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- এরপর সেই মেহেন্দির মধ্যে কিছুপৰিমান লেবুর রস দিয়ে তা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
- এবার মেহেন্দি ও লেবুর রসের মিশ্রণটিকে ভালো করে মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।
- চুলে ভালোভাবে মাখার পর তা আধঘন্টা থেকে শুরু করে এক ঘন্টা পর্যন্ত রাখতে হবে।
এই ভাবে চুলে মেহেন্দি প্রয়োজ করেও খুশকির হাত থেকে মুক্তি পাওয় যায় খুব সহজেই। অনেকেই আবার মেহেন্দির সাথে চা পাতা ডিম আরো কত কি ব্যবহার করে থাকেন। তবে, শুধু মেহেন্দি ব্যবহার করেও দারুন ফল পাওয়া যেতে পারে।
১০. লেমনগ্রাস অয়েল (Lemongrass Oil)
লেমনগ্রাস তেল হল একটি এসেনসিয়াল অয়েল। এটি খুব সহজেই অনলাইনে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে আজ কাল। আর চুলের খুশকি দূর করার উপায় হিসাবে এটি ব্যবহার করে দুর্দান্ত ফলাফল পাওয়া যায়।
উপকরণঃ
- লেমনগ্রাস অয়েল
পদ্ধতিঃ
- যেহেতু এটি এসেনসিয়াল অয়েল তাই এটি চুলের পক্ষে খুবই উপকারী ও এটিকে ডাইরেক্ট চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- স্নানের অন্তত পক্ষে ২-২.৫ ঘন্টা আগে এটাকে চুলে খুব ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে।
- এরপর শ্যাম্পু করে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে, মনে রাখতে হবে লেমনগ্রাস অয়েল ব্যবহার করলে মাইল্ড শ্যাম্পুর ব্যবহার করতে হবে।
এই লেমনগ্রাস অয়েল ব্যবহার করলে খুব সহজেই খুশকির থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে এটিতে অপেক্ষাকৃত বেশ খরচ হয়। অবশ্য এটি ব্যবহারের আরো কিছু সুফল রয়েছে, এর ফলে মাথার স্ক্যাল্প সহজে শুকনো হয়ে যায় না। ফলে খুশকি ফেরত আসার সম্ভবনা কমে যায়, সাথে স্ক্যাল্পের পি এইচ লেবেল ও বজায় থাকে এটি ব্যবহারের ফলে।