এখন গোটা দেশে চলছে দক্ষিণ সিনেমার জয়জয়কার। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন বলিউডের (Bollywood) হিন্দি সিনেমার কাছে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল গোটা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দক্ষিণী সুপারস্টার চিরঞ্জীবীর (Chiranjeevi) একটি ভিডিও। প্রসঙ্গত গত ২৯ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে চিরঞ্জীবী অভিনীত সিনেমা আচার্য। এই সিনেমাটি মুক্তির আগে উত্তর বনাম দক্ষিণের একটি বিতর্ক সভায় অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা।
সেখানে অতীতে তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া অপমানের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন চিরঞ্জীবী। প্রসঙ্গে অভিনেতা স্মরণ করেছেন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত পুরনো একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের কথা। চিরঞ্জীবীর কথায় ১৯৯৮ সালে, তিনি নাগা বাবুর সাথে ‘রুদ্রবীণা’ (Rudravina) নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমাটি জাতীয় সংহতির জন্য সেরা ফিচার ফিল্মের হিসাবে নার্গিস দত্ত পুরস্কার জিতেছিল। সেই পুরস্কার নিতে তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন।
এরপর সেখানে গিয়ে সকলের থেকে যে ধরনের ব্যবহার তিনি সেসময় পেয়েছিলেন তাতে দক্ষিণী সিনেমার একজন অভিনেতা হিসাবে ‘খুবই অপমানিত’ বোধ করেছিলেন চিরঞ্জীবী। অভিনেতা জানান সেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের একদিন আগে সকলের জন্য একটি চা পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই পার্টি টা যে হলের মধ্যে চলছিল তার চারপাশের দেয়ালগুলিতে পৃথ্বীরাজ কাপুর, রাজ কাপুর, দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশের খান্না, ধর্মেন্দ্র প্রমুখ নামজাদা অভিনেতাদের ছবি সহ তাদের সম্পর্কে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা ছিল।
চারপাশে হিন্দি সিনেমার এসব চাকচিক্য দেখে চিরঞ্জীবী আশা করেছিলেন তাঁদের সাউথের ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কেও এমন বিস্তারিতভাবে দেখানো হবে। এরপর কথা বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে ওঠে অভিনেতার। কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি আরও বলতে শুরু করেন ‘কিন্তু সেখানে শুধু এমজিআর (এমজি রামচন্দ্রন) এবং জয়ললিতার নাচের একটি স্থির চিত্র দেখানো হয়। এছাড়া প্রেম নাজিরের একটি ছবি দেখানো হয়েছিল। তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা নায়ক। ব্যাস এটুকুই, আর এটাই তারা সেসময় দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা বলে বর্ণনা করেছিলেন।’
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা ডঃ রাজকুমার, বিষ্ণুবর্ধন, এনটি রামা রাও, এ নাগেশ্বর রাও এবং শিবাজি গণেশনের নাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিরঞ্জীবী বলেন ‘এনাদের নামের কোনো উল্লেখই করা হয়নি। তাদের কোন ছবিও ছিল না। অথচ এনারা আমাদের কাছে ঈশ্বর তুল্য। এটা অত্যন্ত অপমানজনক ছিল। আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম।’ সেইসাথে এদিন বিস্ফোরক অভিযোগ এনে চিরঞ্জীবী বলেন ‘তারা শুধুমাত্র হিন্দি সিনেমাকে ভারতীয় সিনেমা বলে তুলে ধরেছিলেন। এবং অনান্য ইন্ডাস্ট্রি তাদের কাছে শুধুমাত্র আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা বলেই পরিচিত ছিল। ‘
কিন্তু এখন ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। ইদানীং দক্ষিণী সিনেমার বিরাট দাপটের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন বলিউড। এদিন দক্ষিণী সিনেমার এই সাফল্যের জন্য পরিচালক এস এস রাজামৌলিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন চিরঞ্জীবী। অভিনেতার কথায় বাহুবলী, বাহুবলী ২ এবং আর আর আর -এর মতো সিনেমা সাউথের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে গর্বিত করেছে। চিরঞ্জীবীর কথায় ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি প্রমাণ করেছে যে আমরা আর আঞ্চলিক সিনেমা নই। তেলেগু সিনেমা সমস্ত বাধা মুছে দিয়েছে এবং ভারতীয় সিনেমার অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের এই সাফল্যে সকলেই বিস্মিত।’