না টলিউডে দাপিয়ে কাজ তিনি কোনোও দিনই করেননি, কিন্তু যতটুকু করেছেন ততটুকু আজও ভুলতে পারেনি দর্শকেরা। আজ কথা বলব অভিনেত্রী অনন্যা চ্যাটার্জির (Ananya Chatterjee) সম্পর্কে। ধারাবাহিক ‘ সুবর্ণলতা’ (Subarnalata)-এ তাঁর অনবদ্য অভিনয় আজও হার মানাবে একালের যেকোনোও জনপ্রিয় টেলি তারকাকে। তবে আজ এত প্রতিভাবান অভিনেত্রীকে পর্দায় আর দেখা যায়না।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অনন্যা চ্যাটার্জি, কিন্তু কোনোও এক অজ্ঞাত কারণে আজ তিনি টলিউডে ব্রাত্য। এর কারণ কি রাজনীতি না অন্যকিছু সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। ১৯৭৭ সালের ১৬ ই জানুয়ারি কলকাতায় জন্ম তাঁর। যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে বায়োলজিতে স্নাতক হওয়ার পর মমতা শঙ্করের ডান্স অ্যাকাডেমি থেকে নাচ শিখেছিলেন তিনি।
ঠিক সেই সময় থেকেই ছোট পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান অনন্যা। অভিনেত্রীর প্রথম ধারাবাহিক ‘দিন প্রতিদিন’। এরপর ‘তিথির অতিথি’, ‘আলেয়া’ র মতো ধারাবাহিক করে টলিপাড়ায় নিজের জায়গা পোক্ত করেন অভিনেত্রী। ধারাবাহিকের পাশাপাশি অসংখ্য টেলিফিল্মেও তার চোখ জোড়ানো অভিনয় দেখার সুযোগ মিলেছে দর্শকদের।
এরপর ২০০২ সালে বসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘টক ঝাল মিষ্টি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক করেন অনন্যা। ‘রাত বারোটা পাঁচ’ ছবিতেও অনন্যার অভিনয় উচ্চ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে নিজের গন্ডী থেকে বেরিয়ে আদ্যপ্রান্ত বানিজ্যিক ছবি ‘মামা ভাগ্নে’তে অভিনয় করেন তিনি। তবে এরপর আর কমার্সিয়াল ছবিতে দেখা মেলেনি তাঁর।
জহুরি যেমন হীরে চিনতে ভুল করেন না, তেমনই সেইসময় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখ এড়ায়নি এই প্রতিভাবান অভিনেত্রী৷ ২০১০ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘আবহমান’ ছবির মাধ্যমে তিনি নিজের অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মানটুকু পান। মমতা শঙ্কর, দীপঙ্কর দে, যীশু সেনগুপ্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে নিজের ঝুলিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার ভরেন অনন্যা।
এতবড় প্রাপ্তির পরেও টলিউড তাকে জায়গা দেননি। আবহমানের পর আর তাঁকে নায়িকা হিসেবে পাওয়া যায়নি। হয়ত খানিক অভিমান নিয়েই আবার তিনি ফিরে আসেন ছোট পর্দায়। জি বাংলার ‘সুবর্ণলতা’ ধারাবাহিকে তার অভিনয় আজও সিনেবোদ্ধাদের প্রশংসা পায়। তা সত্ত্বেও বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে সেই জায়গা দিলনা।
এরপর ধীরে ধীরে পর্দা থেকে মুছেই যেতে থাকেন অনন্যা। অভিনেত্রীর বৈবাহিক জীবনও সুখের নয়, বিয়ের ৪ বছরের মাথাতেই স্বামীর সাথে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। ‘জয়কালী কলকাত্তাওয়ালী’ ধারাবাহিকে শেষ দেখা গিয়েছিল তাকে, তারপর থেকে ক্রমেই মুছেছেন তিনি।
তবে এতে আক্ষেপ নেই অনন্যার। তার বক্তব্য বাজে কাজ করার চেয়ে বই পড়া ভালো। কাজের জন্য পরিচালকদের হাতে পায়ে ধরতে নারাজ তিনি। শ্যামলা গায়ের রঙ, উজ্জ্বল দুটি চোখ আর এক ঢালা ঘন কালো চুলের অনন্যাকে কি তবে তথাকথিত ফর্সা সুন্দরী নায়িকাদের তালিকায় হারিয়ে গেলেন? প্রশ্ন থেকেই যায়।