বাংলা সিনেমার (Bengali Cinema) একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন হলেন লোকেশ ঘোষ (Lokesh Ghosh)। নব্বইয়ের দশকের বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়,তাপস পাল কিংবা চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর মতো টলিউড অভিনেতাদের দাপট চলছে তখন তাঁদের মাঝেই বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছিলেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক দেবেশ ঘোষ এর ছেলে লোকেশ ঘোষ। যাকে ইন্ডাস্ট্রি আজও মনে রেখেছে ‘লোফার’ সিনেমার জন্য। এছাড়াও লোকেশ ঘোষের রয়েছে আরো একটি পরিচয়।
তিনি হলেন বাংলা সিনেমার খ্যাতনামা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর জামাই অর্থাৎ চুমকি চৌধুরীর প্রাক্তন স্বামী। তবে বাবা নামি পরিচালক হলেও তাঁর সাহায্য ছাড়াই নিজের প্রতিভার জোরেই টলিউডে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল লোকেশ ঘোষের। ১৯৯৬ সালে ‘নাচ নাগিনী নাচ রে’ সিনেমার হাত ধরে প্রথম পা রেখেছিলেন বাংলা সিনেমা জগতে।তবে তখনকার সময় ইন্ডাস্ট্রিতে বিখ্যাত পরিচালকের ছেলে হয়েও বাবার কোনো সাহায্য নেননি তিনি। এমনকি তার বাবাও নাকি সেই সময়কার প্রথম সারির পরিচালক এবং প্রযোজকদের বলেও রেখেছিলেন তার ছেলেকে যেন তারা কাজে না নেয়। তাই লোকেশ নিজেই পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছিলেন বাংলা সিনেমায়।
২০১৩ সালে ‘ভগবানের মাথায় হাত’ সিনেমায় শেষবার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এরপর বাংলা সিনেমা জগত থেকে একপ্রকার হারিয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। লোকেশ ঘোষের অভিনয়ের ঝুলিতে রয়েছে ‘রাখি পূর্ণিমা’, ‘শ্রীমান ভূতনাথ’, ‘বারুদ’, ‘বিধাতার খেলা’, ‘শেষ বিচার’, ‘গরিবের সংসার’-এর মতো সিনেমা। যারা অভিনেতার সিনেমাগুলি দেখেছেন তারা জানেন লোকেশ ঘোষের বেশিরভাগ সিনেমাতেই তার তার নায়িকা ছিলেন অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী। একসাথে অভিনয়ের সূত্রেই তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল প্রেমের সম্পর্ক।
এছাড়া অঞ্জন চৌধুরীও ভীষণ পছন্দ করতেন লোকেশকে। অভিনেতা নিজেও একসময় নিজের মুখে জানিয়েছিলেন তার ক্যারিয়ারের উত্থানের পিছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিল অঞ্জন চৌধুরীর। একসময় পরিচালক নিজে দাঁড়িয়ে থেকেই লোকেশের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের বড় মেয়ে চুমকির। কিন্তু লোকেশের সাথে সেই বিয়ে সুখের হয়নি। পর্দায় নায়ক হলেও লোকেশ বাস্তবে ছিলেন মদ্যপ। মদ খেয়ে চুমকির গায়ে হাতও পর্যন্ত তুলতেন তিনি।
তাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই মেয়েকে নিয়ে সংসার ছেড়েছিলেন অভিনেত্রী। পরবর্তীতে চুমকি চৌধুরী আবার বিয়েও করেছেন। তবে শুধু বৈবাহিক জীবনেই নয়। ব্যক্তিগত জীবনেও বিরাট খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন অভিনেতা। ২০০৪ সালে মারা যায় লোকেশ ঘোষের বাবা দেবেশ ঘোষ। সে সময় তার নিজের দিদি হাতিয়ে নিয়েছিলেন বাবার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
তবে এই নিঃসঙ্গ জীবনেই ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন আগামী দু বছরের জন্য তাঁর হাতে নাকি এমন কিছু পরিকল্পনা রয়েছে যাতে ইন্ডাস্ট্রি তাকে নিয়ে আবার নতুন করে ভাববে। একটা সময় তিনি নিজের জীবনে লরির দালালি থেকে শুরু করে হোটেল ব্যবসা ও করেছেন। তবে এখন অতীত ভুলে তিনি আবার অভিনয়ে ফিরতে চাইছেন। খুব তাড়াতাড়ি নাকি তার কিছু ছবি মুক্তিরও কথা চলছে।