বাংলা সিনেমা (Benagali Cinema) জগতের একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী হলেন সন্ধ্যা রায় (Sandhya Roy)। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বাংলা সিনেমার পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন (Birthday)। সদা-হাস্য, মিষ্টিভাষী এই অভিনেত্রী আজই পা দিয়েছেন ৮২ বছর বয়সে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাংলা সিনেমা দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন তিনি। বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে তখন সিনহা অঞ্জন চৌধুরী কিংবা স্বামী তরুন মজুমদারের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ অভিনেত্রীর অভিনয়ের ঝুলি।
তার সাবলীল অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে গোটা বাংলা সিনেমা জগত। পরনে আটপৌরে শাড়ি পরা আর কপালে সিঁদুরের বড় টিপ। বরাবরই বাঙালিয়ানায় মোড়া অভিনেত্রীর এই রূপ দেখে মুদ্ধ হয়েছেন বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা। তবে এখন আর তাকে বাংলা সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায় না তাঁকে। একসময় উত্তম কুমার পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু সিনেমাতেও নায়কদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সন্ধ্যা রায়কে।
বাংলা সিনেমার প্রথম প্রথম সারির এই অভিনেত্রীর অভিনয় জীবন যতই বর্ণময় হোক না কেন ছোটবেলাটা ছিল কঠিন প্রতিকূলতায় মোড়া। জানা যায় সন্ধ্যা রায় খুব ছোটবেলাতেই হারিয়েছিলেন নিজের মা-বাবা দুজনকেই। ১৯৪১ সালের নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু মাত্র ৭ বছর বয়সেই পিতৃহারা হয়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। আর তার দু’বছর যেতেই মাকে হারিয়ে জগতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি।
জানা যায় এরপর তিনি চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে মামার বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও চরম অর্থ কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাঁকে। যার জন্য মাঝপথে লেখাপড়াও ছাড়তে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। জানা যায় পরে এক বস্তিতে শরণার্থী হিসেবে ঠাঁই হয়েছিল তাঁর। সেখানে বস্তির মেয়েদের সাথে ‘মামলার ফলে’ সিনেমায় শুটিং দেখতে গিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় বাপ-মা মরা মেয়েটার।
ভিড়ের মধ্যেই তিনি নজরে পড়ে গিয়েছিলেন পরিচালক পশুপতিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি তাঁকে ভিড়ের একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এরপর সরাসরি তাঁর কাছে সুযোগ আসে অন্তরীক্ষ ছবিতে অভিনয় করার। এরপর বাকিটা ইতিহাস। একের পর এক অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় সব বাংলা সিনেমায়। তালিকায় রয়েছে ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’. ‘পলাতক’,’ঠগিনি’,’ ফুলেশ্বরী’ কিংবা ‘বাবা তারকনাথ’-এর মত জনপ্রিয় সব বাংলা সিনেমায়।
শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা রায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন বেশ কিছু হিন্দি সিনেমাতেও। সেই তালিকায় রয়েছে পূজা কি ফুল, আসলি নকলি, অপরিচিত ইত্যাদি। প্রসঙ্গত সিনেমার অভিনয়ের সূত্রেই পরিচালক তরুণ মজুমদারের সাথে প্রেম হয় তাঁর। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে বিয়েও করেছিলেন তাঁরা । কিন্তু সেই বিয়েও স্থায়ী হয়নি।
পরবর্তীতে পরিচালক তরুণ মজুমদারের সাথে নাম জড়ায় মহাশ্বেতা রায় নামে এক উড়িয়া অভিনেত্রীর। এরপরেই ফাটল ধরে তরুণ মজুমদার এবং সন্ধ্যা রায়ের সংসারে। আইনি বিচ্ছেদ না হলেও ছাদ আলাদা হয়ে যায় তাঁদের। প্রসঙ্গত গত বছরেই প্রয়াত হয়েছেন তরুণ মজুমদার। কিন্তু আজও অভিনেত্রী তার স্বামী হিসেবে তরুন মজুমদারকেই মানেন।