ভারতের প্রথম মহিলা সুপারস্টার (First female superstar) কে? এই নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকে। কেউ বলেন মধুবালা, কেউ সুচিত্রা সেন, কারোর আবার মত শ্রীদেবী। তবে অনেকেই জানেন না, দেশের প্রথম মহিলা সুপারস্টার ছিলেন বাঙালি অভিনেত্রী কানন দেবী (Kanan Devi)। ১৯১৬ সালের ১২ এপ্রিল এক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে (Bengali family) জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তবে ছেলেবেলায় পেটের দায়ে পরিচারিকার কাজও করেছেন। শোনা যায়, সেই সময় নাকি দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও জুটত না তাঁর।
তবে ছেলেবেলাতেই রতনচন্দ্রের সান্নিধ্যে থেকে নানান বই পড়া এবং গান শোনার অভ্যের হয়ে গিয়েছিল কানন দেবীর। শোনা যায়, গান শুনে মুখে পাউডার লাগিয়ে নাকি আয়নার সামনে দারিতে তিনি নাচতেন। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী ১৯২৬ সালে ম্যাডান থিয়েটার্সের ‘জয়দেব’এর হাত ধরে প্রথম অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন কানন দেবী। অভিনেত্রীর এক পাড়ার কাকা তাঁকে এই সুযোগ দিয়েছিলেন।
তবে শুরুতেই সাফল্য পাননি কানন দেবী। অভিনেত্রীর প্রথম সাফল্য এসেছিল ১৯৪২ সালে। সেই বছরই রিলিজ করেছিল ‘জবাব’ ছবিটি। সেই সিনেমায় তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়ে গিয়েছিল দর্শকদের। বক্স অফিসেও দারুণ ব্যবসা করেছিল সেই সিনেমা। অবশ্য শুধু অভিনয়ই নয়, ‘ইয়ে দুনিয়া হ্যায় তুফান মেল’ গানটিও নিজের কণ্ঠে গেয়েছিলেন তিনি।
অভিনয় জগতে নিজের অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে সম্মানীয় ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার পেয়েছিলেন কানন দেবী। নিজের কেরিয়ারে প্রায় ৭০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছেন ‘জওয়ানি কি রাত’, ’সাপুড়ে’, ‘হারজিত’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘লগান’এর মতো ছবি।
অনেকেই জানেন না, ১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শেষ উত্তর’ সিনেমার ‘আমি বনফুল গো’ গানটিও আসলে কানন দেবীরই গাওয়া। নিজের সুদীর্ঘ কেরিয়ারে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন অভিনেত্রী। ‘ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত এবং অন্নদা দিদি’ ছবিতে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল এই তিন তারকাকে।
তবে শুধুমাত্র বাংলা সিনেমাই নয়, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রচুর নামী তারকাদের সঙ্গেও স্ক্রিন শেয়ার করেছেন দেশের প্রথম মহিলা সুপারস্টার। পৃথ্বীরাজ কাপুর, অশোক কুমার, ছবি বিশ্বাসের মতো খ্যাতনামা শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। কানন দেবী আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও নিজের কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি সিনেপ্রেমী মানুষের মনে ঠিক জীবিত আছেন।