যেকোনো সিনেমার ক্ষেত্রে নায়ক নায়িকাদের পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন সেই সিনেমার খলনায়ক নায়িকারাও (Villain)। বিশেষ করে তাদের গা জ্বালানো সংলাপ আর চোখ মুখের এক্সপ্রেশন দেখে রীতিমতো রাগে গজগজ করতে শুরু করেন দর্শক। বাংলা সিনেমা (Bengali Cinema) জগতের এমনই একজন জনপ্রিয় খলনায়িকা হলেন গীতা দে (Gita Dey)।
একটা সময় এমনই ছিল যে বাংলা সিনেমার পর্দায় তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল সংসার ভাঙার গল্প। তাঁর বলা ‘মুখে মুখে নুড়ো জেলে দেবো!’ সংলাপ আজও মনে রেখেছেন দর্শক। পর্দার জাঁদরেল খলনায়িকাকে দেখলে মারার জন্য রাস্তাঘাটে রীতিমতো তেড়ে আসতেন দর্শক। একবার এক সাক্ষাৎকারে এমনই এক ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী নিজেই।
তিনি নাকি একবার কোন এক সিনেমা হলে দর্শকাসনে বসে সিনেমা দেখছিলেন। কিন্তু আচমকাযই সিনেমা হলের লাইট জ্বলে যাওয়ায় তিনি নজরে পড়ে যান দর্শকদের। তাঁকে চিনতে পারা মাত্রই তখনই হল ভর্তি লোকজন তাঁকে তেড়ে মারতে আসেন। যদিও সে যাত্রায় কোনরকমে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন গীতা দে। তবে দর্শকদের এই রাগ আর ক্ষোভই খবি একজন অভিনেত্রী হিসাবে গীতা দের কাছে ছিল সবচেয়ে বড় পাওনা।
তবে পর্দার এই কুচুটে পিসিমা কি বাস্তবেও এমন স্বভাবের ছিলেন? একেবারেই না, বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন ভীষণ সরল। আর তাঁর সেই সরলতারই সুযোগ নিয়েছিলেন অনেকে।অভিনেত্রীর জীবনের কষ্টের কথা শুনলে জল এসে যায় চোখে। আসলে ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে বড় হয়েছিলেন গীতা দে। এছাড়া, তাঁর অভিনয়ে আসাও কিন্তু শখে নয় ভাগ্যের ফেরেই তিনি এসেছেন অভিনয় জগতে।
জানা যায় গীতা দের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখনই তার বাবার সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল মায়ের। পরবর্তীতে অভিনেত্রীর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন ভাইবোনও হয়েছিল গীতা দের।কিন্তু সংসারের কোন দায়িত্ব না পালন করেই তাঁদের একা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই নতুন বাবা। এরপর অভিনেত্রীর মা থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন। সে সময় মাত্র ছয় বছর বয়সেই মায়ের সাথেই অভিনয় যোগ দিয়েছিলেন গীতা দে । গীতা দের যখন ১৫ বছর বয়স তখন মৃত্যু হয় তাঁর মায়ের । সে সময় ভাইবোনদের দায়িত্বও এসে পড়ে তার কাঁধে।
পরবর্তীতে অসীম কুমার দে নামে একজনের সাথে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু সেখানেও সংসার সুখের হয়নি। তাঁর সৎ শাশুড়ি তাঁকে একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। তাই কায়দা করে তাঁকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে তিনি ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর সেই সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রী। তবে ছাদ আলাদা হলেও স্বামীর সাথে আইনি বিচ্ছেদ হয়নি গীতা দের । তাই আজীবন স্বামীর পদবী নিজের নামের সাথেই বহন করেছিলেন করেছেন অভিনেত্রী।