বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে (Tollywood) এমন বহু খলনায়িকা (Villain) রয়েছেন যারা নিজেদের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছেন। এমনই একজন অভিনেত্রী হলেন মীনাক্ষী গোস্বামী (Meenakshi Goswami)। বহু সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে বহু বছর হয়ে গেল তাঁকে পর্দায় দেখেননি দর্শকরা। এখনও মীনাক্ষীর ছবি দেখতে বসলে তাই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন তাঁরা। আজকের প্রতিবেদনে টলিউডের এই নামী অভিনেত্রীর (Actress) কাহিনীই তুলে ধরা হল।
১৯৩৩ সালের ২১ মে এলাহাবাদের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার জন্ম মীনাক্ষীর। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বড় অ্যাথলিট হওয়ার। ভালো সাঁতারু হওয়ার পাশাপাশি দারুণ ভলিবলও খেলতেন তিনি। অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই নামী অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য রাশিয়াতেও গিয়েছিলেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মীনাক্ষী সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলার দায়িত্বও সামলাতেন।
কিন্তু শোনা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মীনাক্ষীর শারীরিক বেশ কিছু অক্ষমতা ধরা পড়েছিল। যে কারণে খেলার দুনিয়াকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন তিনি। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি আচমকাই যোগ দেন ‘পিপলস লিটল থিয়েটার’ নামক একটি নাট্যদলে। সেখানে অভিনয়ের পাশাপাশি গুরু সাধন গুহ, অতীনলাল গাঙ্গুলীর কাছ থেকে নাচও শিখেছিলেন তিনি।
সেই বছরই ‘দক্ষযজ্ঞ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মীনাক্ষী। কিন্তু সেই ছবি খুব একটা হিট করেনি। ফলে তেমন পরিচিতি পাননি তিনি। অভিনেত্রীর ভাগ্য ঘুরে যায় উত্তম কুমার অভিনীত ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমায় অভিনয়ের পর। সেই ছবির হাত ধরেই পরিচালকদের নজরে পড়ে যান তিনি। একে একে আসতে থাকে কাজের সুযোগ।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একাধিক আইকনিক ছবিতে দজ্জাল শাশুড়ির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মীনাক্ষী। সেই লিস্টে নাম রয়েছে ‘ছোট বউ’ সহ একাধিক সুপারহিট সিনেমার। শোনা যায়, দজ্জাল শাশুড়ি চরিত্রে তাঁর অভিনয় এতটাই সাবলীল ছিল যে পরিচালকরা তাঁকে সেই চরিত্র ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় নিতেই চাইতেন না।
টলিউডের এই নামী অভিনেত্রীর ঝুলিতে রয়েছে প্রচুর হিট সিনেমা। ‘মেঘমুক্তি’, ‘অপরূপা’, ‘তনয়া’, ‘দুটি পাতা’, ‘মায়াবিনী’ ‘অমর গীতি’, সহ বহু ছবিতে মীনাক্ষীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শকরা। কয়েকটি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। অভিনেত্রীকে শেষ দেখা গিয়েছিল ‘আলেয়ার আলো’ ছবিতে। ২০১২ সালেরর ৮ এপ্রিল প্রয়াত হন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর মৃত্যুসংবাদ কোনও সংবাদপত্রে সেভাবে ঠাঁই পায়নি। টলিপাড়ার এত উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হলেও কোনও শেষ সম্মান বা সংবর্ধনাও পাননি তিনি। চুপিসারেই চিরবিদায় নিয়েছেন বাংলা সিনেমার এই নামী অভিনেত্রী।