পৃথ্বীরাজ কাপুর এমন একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন যার হাত ধরে বহু কিংবদন্তি অভিনেতা-অভিনেত্রী বলিউডে (Bollywood) পা রেখেছিলেন। তাঁর ছেলে রাজ কাপুর ইন্ডাস্ট্রির নামী সুপারস্টারদের মধ্যে একজন। আর এই নায়কের সঙ্গে যে নায়িকাকে পর্দায় দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো দর্শকরা, তিনি হলেন নার্গিস (Nargis Dutt)। সেই সময় বলিউডের নম্বর ওয়ান হিরো যদি রাজ হয়ে থাকেন, তাহলে নম্বর ওয়ান হিরোইন ছিলেন নার্গিস।
খুব কম বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে পা রেখেছিলেন নার্গিস। তখন অভিনেত্রীর বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। সেই সময় তাঁকে ‘বেবি নার্গিস’ বলে চিনতেন দর্শকরা। পরবর্তীকালে এই ‘বেবি নার্গিস’ই হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির নম্বর ওয়ান নায়িকা। ১৯৪৩ থেকে ১৯৬০- টানা দু’দশক বলিউডে রাজত্ব করেছেন তিনি। জিতেছেন অগণিত মানুষের মন।
মাত্র ২৮ বছর বয়সে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিতে নার্গিস যা অভিনয় করেছিলেন তা এখনও দর্শকদের মনে রয়েছে। রাধা চরিত্রটির জন্য জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি। অস্কারের জন্যেও অভিনেত্রীকে মনোনীত করা হয়েছিল। তবে সেই পুরস্কার অধরাই থেকে যায়। তবে এই ছবির সেট থেকে সুনীল দত্তের সঙ্গে নার্গিসের প্রেম পর্ব শুরু হয়।
‘মাদার ইন্ডিয়া’ নার্গিসের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুনীল। শোনা যায়, ছবির শ্যুটিংয়ের সময় নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অভিনেত্রীকে আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন অভিনেতা। আর তা দেখেই মন হারান বলিউডের ‘মহানায়িকা’। যদিও সুনীল দত্তের আগেও নার্গিসের জীবনে প্রেম এসেছিল। রাজ কাপুরের সঙ্গে অভিনেত্রীর সম্পর্কের কথা কারোর অজানা নয়। তবে বিবাহিত রাজ স্ত্রীকে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। সেই জন্য বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন নার্গিস। অভিনেত্রী নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, রাজের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি আত্মহননের কথাও ভেবেছিলেন।
এরপর সুনীল দত্তের হাত ধরে ফের বসন্ত আসে নার্গিসের জীবনে। ১৯৫৮ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন তাঁরা। বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে সংসারে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন নায়িকা। এরপর ফের ১৯৬৭ সালে ‘রাত অউর দিন’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছিলেন সুনীল-পত্নী।
এত সফল অভিনেত্রী হলেও নার্গিসের আয়ু খুব বেশি ছিল না। খুব কম বয়সেই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। শোনা যায়, নার্গিসের খুব ইচ্ছা ছিল ছেলে সঞ্জয় দত্তের ডেবিউ সিনেমা দেখবেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। মায়ের মৃত্যু মাস তিনেক পর রিলিজ করেছিল সঞ্জয়ের প্রথম ছবি ‘রকি’। স্ত্রীকে হারানোর পর সুনীল দত্ত তাঁর নামে ‘নার্গিস দত্ত মেমোরিয়াল ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আজ বলিউডের ‘মহানায়িকা’ আমাদের মধ্যে না থাকলেও, নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের মনে জীবিত আছেন তিনি।