উত্তম কুমার (Uttam Kumar) মানেই বাঙালির কাছে আবেগের আরেক নাম। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালির প্রিয় এই মহানায়ক কিন্তু শুধুমাত্র একজন অভিনেতা নন,সেইসাথে তিনি ছিলেন সুরকার, প্রযোজক এবং পরিচালক। গোটা বাংলা সিনেমা (Bengali Cinema) জগৎ সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার দ্বারা। যদিও সিনেমাপ্রেমীরা অকালেই হারিয়েছেন তাঁকে।
তবুও সর্বসাকুল্যে উত্তম কুমারের চলচ্চিত্র জীবনের মোট বয়স ৩০ বছর। এই সময়ের মধ্যেই তিনি অভিনয় করেছেন মোট ২০১টি ছবিতে। তাঁর বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোট ৩৫জন অভিনেত্রী। তাঁদের মধ্যে সুচিত্রা সেনের সাথেই মহানায়ক জুটি বেঁধেছেন মোট ২৯টি সিনেমাতে। তবে তাঁর সিনেমার সর্বাধিক ৩২টি সিনেমাতেই নায়িকা হয়েছিলেন সুপ্রিয়া দেবী।
উত্তর কলকাতার বাসিন্দা, উত্তম কুমারের পিতৃপ্রদত্ত আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। একথা সকলেরই জানা। কিন্তু তাঁর এই অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে উত্তম কুমার হওয়ার জার্নিটা কিন্তু আজও অজানা অনেকের কাছেই। আসলে তাঁর সিনেমায় নামার কাহিনী এবং ব্যর্থ নায়ক থেকে ধীরে ধীরে মহানায়ক হয়ে ওঠার জার্নিটা কোন সিনেমার চিত্রনাট্য থেকে কিন্তু কোন অংশে কম নয়।
এক সময় করা কঠিন পরিশ্রমের ফলেই পরবর্তীতে আকাশছোঁয়া সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। যার পিছনে বিরাট অবদান ছিল বিখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ি সান্যালের। সেসময় পরপর তিনটি ফ্লপ সিনেমা করে ইন্ডাস্ট্রি থেকে একপ্রকার বাদ পড়া নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তখনকার অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। এমন সময় বসু পরিবার সিনেমার জন্য নায়ক খুঁজছিলেন পরিচালক নির্মল দে।
যদিও তিনি নায়ক হিসেবে ঠিক করেছিলেন তখনকার জনপ্রিয় অভিনেতা কালী ব্যানার্জিকে। কিন্তু তখন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় চিন্তায় পড়েছিলেন নির্মল দে। কিন্তু তখন তাঁকে আশ্বস্ত করে পাহাড়ি সান্যাল বলেছিলেন ‘এত চিন্তা করছ কেন? হাতের কাছেই নায়ক রয়েছে’। একথা শুনে নাকি আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন নির্মল দে। কিন্তু পাহাড়ি সান্যাল যখন তাঁর পছন্দের নায়কের নাম বলেন তখনই হতাশ হয়ে নির্মল দে বলেছিলেন, ‘পাহাড়িদা আপনি কি আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন ওকে নিলে হলে ঢিল পড়বে। কে সামলাবে বলুন?’
তখন পাহাড়ি সান্যাল উত্তম কুমারের নামটাই পাল্টে ফেলার প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন ‘নামটা পাল্টে দাও কেউ জানতে পারবে না। আমি কথা দিচ্ছি ওকে নিয়ে তুমি ঠকবে না। এখন ও ইস্পাতের মতো কঠিন হয়ে উঠেছে শুধু অস্ত্র তৈরি করার অপেক্ষা’। এরপর তখনকার বেনামী নায়ক অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় কে ডেকে পাহাড়ি সান্যাল জানতে চেয়েছিলেন ‘বাপের দেওয়া নামের মায়া ত্যাগ করতে পারবে? তাহলে একটা সুযোগ আছে।’
তখন ঐ অভিনেতা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই পাহাড়ি সান্যাল জানতে চেয়েছিলেন ‘অন্য নাম আছে তোমার?’ তখন জবাবে ছেলেটি বলেছিলেন ‘দাদু আমাকে উত্তম বলে ডাকতেন’। একথা শুনে লাফিয়ে উঠে পাহাড়ি সান্যাল বলেছিলেন ‘নির্মল দেরি করো না, উত্তম নামটা লাগিয়ে দাও, লেগে যাবে।’ বাকিটা ইতিহাস। ‘বসু পরিবার’ সিনেমার হাত ধরেই অরুণকুমার থেকে উত্তম কুমার হওয়ার সফর শুরু হয়েছিল তাঁর।