দু’বার ক্যান্সারকে পরাজিত করে হাসি মুখে ফিরেছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী (Tollywood actress) ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। মারণ রোওগের বিরুদ্ধে এই অভিনেত্রীর জয় অনুপ্রেরণা হয়েছিল বহু মানুষের কাছে। আশা জুগিয়েছিল বহু রোগী এবং তাঁদের পরিবারকে। যেভাবে দু’বার কর্কট রোগকে পরাজিত করেছিলেন ‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রী তা সত্যিই কুর্নিশ জানানোর মতোই। কিন্তু এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হল না।
গত রবিবার মাত্র ২৪ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু দ্বিতীয়বার ক্যান্সারকে পরাজিত করার পর তো একেবারে সুস্থ ছিলেন অভিনেত্রী, হঠাৎ করে কী এমন হল তাঁর? ব্রেন স্ট্রোকের কারণটাই বা কী?
জানিয়ে রাখি, গত ১ নভেম্বর হঠাৎ করে বাড়িতেই ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল ঐন্দ্রিলার। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিনেত্রীর পরিস্থিতি দেখার পর তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। অপারেশনের পর ঐন্দ্রিলার অবস্থা খানিক স্থিতিশীল হলেও, জীবনের শেষ দিনগুলি তিনি কোমায় সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেই কাটিয়েছেন। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
ঐন্দ্রিলার সিটি স্ক্যান করা হলে জানা যায়, তারমাথার বাঁ দিকে রক্ত জমাট বেঁধেছে। বিশেষজ্ঞ এক নিউরো সার্জেনের হাতে কঠিন অপারেশন করা হিয় অভিনেত্রীর। কিন্তু এরপরের বায়োপসি রিপোর্ট দেখেই চমকে যান সকলে। কারণ বায়োপসি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ইউইংয়ের সারকোমা থেকে মাথার মেটাস্টেস হয়েছে ঐন্দ্রিলার। জানা গিয়েছে, এই ইউইংয়ের সারকোমা রোগটি প্রচণ্ড ভয়ানক।
‘জিয়ন কাঠি’ অভিনেত্রীর এই রিপোর্ট দেখা মাত্রই নিউরোলজিস্ট, নিউরোসার্জেন, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট, মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ও রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্টকে নিয়ে একটি চিকিৎসকদের টিম গঠন করা হয়েছিল। ঐন্দ্রিলা ভেন্টিলেশনে থাকলেও অপারেশনের পর কিন্তু তাঁর মধ্যে সুস্থ হওয়ার বেশ কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ঠিক ১০দিনের মাথায় মাথার বাঁ দিকে একটি বিশাল স্ট্রোক হয়। এরপর মাথার ডান দিকেও হয়।
চিকিৎসকেরা এই পরপর স্ট্রোকের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন অন্তর্নিহিত ম্যালিগনেন্সের কথা। এরপর ভেন্টিলেশন সাপোর্টের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এরপর থেকেই অভিনেত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে। এর মধ্যেই একাধিক হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে গিয়েছিল। ঐন্দ্রিলার পরিবারের অনুরোধে বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল।
যদিও বাইরের চিকিৎসকেরাও ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থা দেখে জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি তাঁরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছিলেন প্রত্যেক চিকিৎসক। কিন্তু শেষে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর রবিবার বেলা ১২:৫৯ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেত্রী। ২০১৫ সালে বোনম্যারো এবং ২০২১ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনের এই তৃতীয় লড়াইয়ে নতি স্বীকার করেন ‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলা শর্মা।