খুব তাড়াতাড়ি স্টার জলসার (Star Jalsha) পর্দায় আসছে ছোট পর্দার বামাক্ষ্যাপা অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury) অভিনীত নতুন মেগা সিরিয়াল (New Serial) ‘রামপ্রসাদ’ (Ramprosad)। কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের চরিত্রের হাত ধরে আরও একবার ছোটপর্দায় কামব্যাক করেছেন অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ শেষ হওয়ার পর প্রায় এক বছরের বিরতি কাটিয়ে আরো একবার পিরিয়ডিক্যাল বা মাইথোলজি কেন্দ্রিক ধারাবাহিকের ফিরছেন অভিনেতা।
আগের সিরিয়ালে বামাক্ষ্যাপা অর্থাৎ সব্যসাচীর ছিল মুখ ভর্তি দাড়ি আর এবার রামপ্রসাদ হয়ে সেই সব্যসাচীই এখন ক্লিন শেভ। যা নিয়ে ইতিমধ্যে অনুরাগীদের মধ্যে হয়েছে বেশ আলোচনা। নতুন সিরিয়াল থেকে শুরু করে কাজের প্রস্তুতি এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানান অজানা কাহিনী নিয়ে সম্প্রতি এই সময় ডিজিটালের সাথে এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে বসে ছিলেন অভিনেতা। সেখানে সব্যসাচী জানিয়েছেন দীর্ঘ চার বছর পর অবশেষে ক্লিন শেভ হয়েছেন তিনি। আর এই অবস্থায় তাকে দেখে তার মা-ই নাকি তাকে চিনতে পারেননি।
সব্যসাচীর কথায় ‘এতদিন ক্লিন শেভ করার জন্য বলতো। এবার আমাকে দেখে বলল দাড়িটাই ভালো ছিল বুঝলি’! মহাপীঠ তারাপীঠের বামাক্ষ্যাপের পর এবারের রামপ্রসাদ সে দিক দিয়ে তিনি কি কোন ভাবে ছোট পর্দায় টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন? এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে অভিনেতা স্পষ্ট জানিয়েছেন একেবারেই না। মহাপীঠ তারাপীঠ শেষ হবার পর তার কাছে নাকি দশ বারোটা আলাদা আলাদা প্রজেক্ট-এর অফার এসেছিল। কিন্তু তিনি নিজে থেকেই এই এই চরিত্র টাই বেছে নিয়েছেন।
আর টাইপ কাস্ট হওয়ার নিয়ে না ভেবে তিনি এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। সব্যসাচীর কথায় ‘বামা-রামপ্রসাদের মতো চরিত্র আমার সত্ত্বাকে স্যাটিসফাই করে’। কথায় কথায় এদিন অভিনেতা জানিয়েছেন ছোট থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনয় করার। তাই পেট চালানোর জন্য নয় তিনি স্বপ্নপূরণের জন্যই এসেছিলেন অভিনয় করতে।তবে সব্যসাচীর কথায় অভিনয়ে আসার আগে অনেক ঘাটের জল খেয়েছেন তিনি। একটা সময় এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছেন এবং তারপর সেটাও ছেড়ে ভর্তি হয়েছেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট।
এরপর কর্পোরেট সেলস এর চাকরিও করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই স্বস্তি না পেয়ে একসময় পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে নিজের সঞ্চিত পুঁজিসহ স্টুডেন্ট লোন নিয়ে অক্সফোর্ড গ্রুপ থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছিলেন অভিনেতা। তবে বিদেশে থাকাকালীন এক সময় অর্থ সংকটে পড়েছিলেন অভিনেতা। তাই সেই সময় একপ্রকার পেটের দায়েই কেএফসিতে মেঝে পরিষ্কার করেছেন তিনি। তারপর একটা গ্রিল চিকেন শপে জয়েন করেছিলেন।
আর এখন অভিনয়ের পাশাপাশি একটা নিজস্ব ক্যাফে রয়েছে সব্যসাচীর। কাজের ফাঁকে সময় পেলে সেই ক্যাফেতে এসে কিচেন সামলান তিনি নিজেই। প্রসঙ্গত পর্দায় সব্যসাচী বারবার তারা মায়ের ভক্ত, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একেবারেই ঈশ্বরের বিশ্বাসী নন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন সুপার পাওয়ারে, এ প্রসঙ্গে এদিন সব্যসাচী জানিয়েছেন ‘যতক্ষণ লালবস্ত্র পরে আছি মা তারাকে ছাড়া কিছু চিনি না। প্রথম এবং শেষ কথা. তবে ব্যক্তিগতভাবে নির্দিষ্ট কোন মূর্তিকে পুজো বা আচার পালন করি না’।
এরপরেই এদিন কথা প্রসঙ্গে উঠে আসেন সব্যসাচীর প্রয়াত প্রেমিকা ঐন্দ্রিলা শর্মার কথা। আসলে ঐন্দ্রিলা যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তখন একটি ফেসবুক পোস্ট মিরাকেলের কথা বলেছিলেন সব্যসাচী। ইঙ্গিত মিলেছিল ঈশ্বরের প্রতি টান অনুভব করারও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে এদিন সব্যসাচী জানান ‘প্রথমত ক্লারিফাই করতে চাই ঈশ্বরকে অস্বীকার করছি না দ্বিতীয়ত আমার মতো প্রত্যেকেই জীবনের কঠিনতম সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন কারণ তারা খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চান। প্রচুর মানুষ কলকাতা থেকে ২০০-৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে ওর জন্য পুজো দিয়ে ফুল তাবিজ নিয়ে এসেছিলেন। কারো কারো কাছে এগুলোর গুরুত্ব নাই থাকতে পারে তবে আমি তাদের অপমান করতে পারি না’।
ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছিলেন সব্যসাচী। এদিন তিনি জানান সোশ্যাল মিডিয়ায় আর ফিরবেন না তিনি। কারণ ফিরলে আবার হয়তো অপ্রিয় কিছু স্মৃতি খুঁচিয়ে ঘা করার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া একটা সময় বেশ নিয়মিত লেখালেখি ও করতে দেখা যেত অভিনেতাকে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা দু-দুটো বই। এছাড়া ‘নেপোলিয়ন সমগ্র’ বালে একটা বই লেখা শুরু করেছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু সেই বইটা তিনি আর শেষ করতে পারেননি। লেখার ইচ্ছেই করছে না অভিনেতার এমনকি ইচ্ছেটাও ফেরানোর চেষ্টা করছেন না তিনি।