সিনেমা জগত ভারি অদ্ভুত। এখানে অভিনেতা অভিনেত্রীরা আসেনই মানুষকে বিনোদন দিতে। কিন্তু নাম,যশ, অর্থ, প্রতিপত্তির ভীড়ে কখনো কখনো মানুষের কাছে অজানাই থেকে যায় তাদের ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনের কথা, কঠিন লড়াইয়ের কথা। এক কালে পর্দায় দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের জীবনীও খানিকটা এমন। আশি নব্বইয়ের দশকের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ছিলেন সন্ধ্যা রায়। একাধিক চ্যালেঞ্জিং রোলে অভিনয় করে দর্শকদের মন জিতেছিলেন অভিনেত্রী।
সাদা কালো থেকে রঙিন, বাংলা সিনেমায় দীর্ঘ ২৫ ধরে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন সন্ধ্যা রায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে রুপোলি জগতে পা রাখেন তিনি। তাঁর প্রথম ছবি ‘মামলার ফল’ (১৯৫৭)। অসামান্য অভিনয় কৌশলের তিনি অনায়াসে যে কোনও চরিত্র হয়ে উঠতে পারতেন সার্থকভাবে।
তবে একসময় জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছালেও কেরিয়ারের শুরুতে অনেক বাধা বিঘ্নর সম্মুখীন হতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। মাত্র ৭ বছর বয়সেই বাবাকে হারান সন্ধ্যা রায়। বাবা হারানোর শোক ভুলতে না ভুলতেই ৯ বছর বয়সে চিরকালের মতো মাকে হারিয়ে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। এরপর বাপ-মা হারা ছোট্ট মেয়ে আর উপায় না পেয়ে বাংলাদেশ চলে যান মামার বাড়ি। ওখানকার স্কুলেই লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যান তিনি।
অবশেষে ১৯৫৭ সালে ফের দেশে ফিরে আসেন সন্ধ্যা রায়। আগেই বলেছি , “মামলার ফল” ছবি দিয়ে প্রথম অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ তার। নিজের অভিনয়ের দক্ষতার জোরে এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অভিনেত্রী পরিচালক তরুণ মজুমদারের, পরিচালিত বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
এরপর পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি, বাঁধেন গাঁটছড়াও। যদিও সেই বিবাহিত জীবনও খুব একটা সুখকর হয়নি তার, কিছু বছর বাদেই দিতে হয় ডিভোর্স। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানেও সমান সফল তিনি, ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিতে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯-এর নির্বাচনে বয়সজনিত কারণে নিজেই সরে দাঁড়ান বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।