ছোট থেকে অভিনেতা হবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়ে ওঠেন অনেকেই। তাদের মধ্যে কিছুজন স্বপ্নের অভিনয় জগৎটাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান বাকিরা পাননা। যারা অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নিতে পারেন তাদের কাছে স্বপ্নপূরণ আর কাজ পাওয়ার আনন্দটা আলাদাই মাত্রা এনে দেয়। কিন্তু করোনা মহামারী অভিনয় জগতের চিত্রটা অনেকটা বদলে দিয়েছে। এমন অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন যারা দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
লকডাউনে অভিনেতা অভিনেত্রীরাও আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ঘরবন্দি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মত তাদের সংসারে টান পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অভিনয় ছেড়ে অন্যান্য পেশায় যুক্ত হতে হয়েছে তাদের। টলিউডের এক বেশ পরিচিত মুখ অরিন্দম প্রামাণিক (Arindam Pramanik)। একাধিক সিরিয়াল থেকে শুরু করে সিনেমায় দেখা গিয়েছে তাকে। কাজ করেছেন সাবিত্রী চ্যাটার্জী থেকে শুরু করে বিশ্বনাথ বসুর সাথে। বর্ধমানের মেমরির বাসিন্দা অরিন্দম আজ মাছ বিক্রেতা।
কেন? কারণটা সকলের কাছেই খুব স্পষ্ট। গতবছর থেকে শুরু করে এবছর পর্যন্ত লকডাউনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অভিনয় ইন্ডাস্ট্রি। দীর্ঘদিন কাজ ছাড়াই বসে থাকতে হচ্ছিলো মেমরির সোমেশ্বরতলার বাড়িতে। এদিকে অভিনেতা বিবাহিত, বাড়িতে বাবা মা সবাই রয়েছে। ছেলে হিসাবে সংসারের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধেও অথচ অভিনয়ের পাশাপাশি বন্ধ রোজগার। তাই শেষমেশ বাস্তব জীবনে মাছের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন অরিন্দম। আজ মেমরির বাজারে মাছ বিক্রি করেন অরিন্দম।
প্রতিদিন ভোর ৩টের সময় ঘুম থেকে উঠে কাজের উদ্দেশ্যে রওনাদেন তিনি। এরপর সারাদিন বাজারে মাছ বিক্রি করে যে টাকা পান সেই টাকা দিয়েই চলছে সংসার। এখন অনেকেই ভাবছেন যে টলিপাড়া তো খুলে গিয়েছে শুরু হয়েছে শুটিংয়ের কাজ। তাহলে কেন এখনো মাছ বিক্রি করছেন অরিন্দম। এর উত্তরে অরিন্দমবাবুর বক্তব্য, কাজের অফার এসেছিল আবার কিন্তু ভরসা করতে পারিনি। যদি হটাৎ আবার লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়! তাই আপাতত মাছ বিক্রিটাকেই চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন অভিনেতা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো ফিরবেন অভিনয়ের জগতে।
প্রসঙ্গত, ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল অরিন্দম প্রামাণিকের। অভিনয়ের প্রতি টান থেকেই একাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন নাটকের দলের মধ্যে দিয়েই অভিনয়ের হাতে খড়ি। এরপর ২০১১ সালে সুবর্ণলতা সিরিয়ালে খোকা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন অরিন্দম। এপার বাংলা থেকে ওপর বাংলায় পরিচিতি বেড়েছিল। এরপর একাধিক চরিত্রে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন অভিনেতা।
এতো ভালো অভিনয় আর দর্শকদের থেকে এতোভালোবাসা পাবার পরেও লকডাউনের কারণে দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন অরিন্দম। যে কারণে বাড়ি ফিরে বাবার সাথে পরামর্শ করেই মাছের ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই লকডাউন শিথিল হয়ে শুটিঙের অনুমতি মিলেছে। কবে অভিনয়ে ফিরবেন অভিনেতা? আর কেনই বা ফিরলেন না টলিপাড়ায়! এর উত্তরে তিনি জানান, একবছরের কাছাকাছি মাছের ব্যবসাটা করছি। বেশ খানিটা গুছিয়েও নিয়েছি। এটা দিয়েই সংসার চলছে, তাই এটা ছেড়ে স্বপ্নের পেশায় যাওয়ার ঝুঁকিটা আর নিতে পারিনি।