আসলে ভালোবাসা কেবলমাত্র একটি ক্রিয়াপদ বা শব্দ নয়। এ এক যাপন, দুই আত্মার মিলন। সেখানে ভালোবাসার মানুষটাই সবথেকে বেশি সত্যি আর বাকি সব মিথ্যে।তাইই এই সাদা কালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার পৃথিবীতে আজও ভালোবাসা বেঁচে আছে। আজও সে হিন্দোল জাগায় প্রেমিক হৃদয়ে, আজও প্রেমিকা বসে থাকে প্রেমিকের পথ চেয়ে।
আবার এমনই এক প্রকৃত ভালোবাসার নিদর্শন মিলল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কুলতলিতে। কুলতলি ব্লকের পশ্চিম গোপালগঞ্জের বাসিন্দা শুভঙ্কর ও তার প্রেমিকার গল্পটা আর পাঁচটা প্রেমের গল্পের মতো সাধারণ নয়। শুভঙ্করের প্রেমিকার জীবনটা ছোট থেকেই লড়াইয়ের সংগ্রামের। পেটে থাকা কালেই তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যায়, জন্মের কদিনের মধ্যেই মারা যায় মা-ও। এই অবস্থায় তার একমাত্র আশ্রয় ছিল মাসি, দিদা ও দাদু ৷
কিন্তু সর্ষের মধ্যেই তো ভুত থাকে। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই দাদুর দ্বারা লাগাতার যৌন হেনস্থার শিকার হয় ওই কিশোরী। ও তখন ক্লাস সিক্স। বাড়িতে না থাকায় টানা ৬দিন দাদুর কাছে ধর্ষিত হয় ও। তখন তার প্রেমিক শুভঙ্কর। শুভঙ্কর তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। শুভঙ্করের উদ্যোগেই কুলতলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত মানিক জানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
কিন্তু এরপর আরও কঠিন হয় মেয়েটির জীবন। অভিযোগ দায়েরের দায়ে তাকে বাড়িছাড়া হতে হয়।তার মাসিরা তাকে যৌনপল্লীতে বেচে দেওয়ারও চেষ্টা করে। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায়, ২০১৯শে মাধ্যমিক পাশ করে সে।
এদিকে এতদিনে স্নাতক হয়ে গিয়েছে শুভঙ্কর-ও। উপার্জনের জন্য গাড়ি চালানো, মাছের ব্যবসা শুরু করেন। সেই পুরোনো প্রেম তবুও যেন অদৃশ্য সুতোর মত আঙুলে জড়িয়েছিল। ছোটবেলার প্রেমিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শুভঙ্কর ৷ প্রাপ্তবয়স্ক হলে ওই যুবতী হোম কতৃপক্ষের কাছে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন ৷
অবশেষে গত বুধবার কুলতলির পুর্ব গোপালগঞ্জে শুভঙ্করের বাড়িতেই চারহাত এক করা হয় সকলের উপস্থিতিতে ৷ স্ত্রীয়ের মর্যাদা দিয়ে সসম্মানে তার প্রেমিকাকে ঘরে তোলে শুভঙ্কর।