হিন্দি সিনেমা জগতে এমন কয়েকজন অভিনেতা রয়েছেন যাঁরা মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকবেন তাদের অসাধারণ সব চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। আমাদের ভারতীয় সিনেমা জগতের এমনই একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হলেন আমজাদ খান (Amjad Khan)। নিজের দীর্ঘ জীবনে দুর্দান্ত সব চরিত্রে অভিনয় করে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তবে আমজাদ খানের নাম শুনলে আজও সবার প্রথমে আমাদের চোখে ভাসে শোলের (Sholay) গব্বর সিংয়ের (Gabbar Singh) সেই বিখ্যাত কন্ঠস্বর।
বলিউডের এই বিখ্যাত খলনায়ক নিজের দীর্ঘ ২০ বছরের অভিনয় জীবনে মোট ১৩২টিরও বেশী সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যা এখনও দর্শকদের মনে রীতিমতো শিহরণ জাগায়। এমনিতে সকলেই কমবেশি আমজাদ খানের স্টারডম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো বিনোদন জগতের ঝাঁপিয়ে চকচকে গ্লামার ওয়ার্ল্ডের পিছনে লুকিয়ে থাকা সেই কদর্য রূপের কথা। একসময় যার স্বীকার হয়েছিলেন স্বয়ং বলিউডের গব্বর সিং।
বলা হয় ছেলে শাদাব খান আমজাদ খানের জন্য অত্যন্ত লাকি। কারণ শাদাব যেদিন জন্মগ্রহণ করেন সেই দিনেই শোলে সিনেমার জন্য সাইন করেছিলেন আমজাদ খান। কিন্তু একসময় অভিনেতা এতটাই আর্থিক সংকট ডুবে গিয়েছিলেন যে সদ্যোজাত ছেলে শাদাব খান এবং স্ত্রী শৈলাকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করানোর জন্য ৪০০ টাকাও ছিল না তাঁর পকেটে।সেই শোচনীয় পরিস্থিতিতে লজ্জায় হাসপাতালে গিয়ে নিজের স্ত্রীর সামনে পর্যন্ত দাঁড়াতে পারছিলেন না অভিনেতা।
সেসময় আমজাদ খান চেতন আনন্দের সিনেমা ‘হিন্দুস্তান কি কসম’-এ অভিনয় করছিলেন। কিন্তু শুটিং সেটে গিয়েও নিজের ওপর রাগে, দুঃখে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিনেতা। তখন আমজাদ খানকে ৪০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন চেতন আনন্দ। প্রসঙ্গত শেষ বয়সে হাই ডোজের সব ওষুধ খাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গিয়েছিল আমজাদ খানের। ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে মাত্র ৫১ বছর বয়সে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
তবে অভিনেতার আরও বেশি আর্থিক সংকটের মুখে পড়েন অভিনেতার স্ত্রী শৈলা। ছেলে শাদাব ছাড়াও আমজাদ খানের আরও এক ছেলে সীমাব এবং মেয়ে আহলাম। প্রসঙ্গত আমজাদ খান তার বন্ধুদের এতটাই বিশ্বাস করতেন যে তিনি টাকা কখনও ব্যাঙ্কে রাখতেন না। সবসময় বন্ধুদের কাছেই টাকা রাখতেন তিনি। সিনেমার প্রযোজকদেরও সুবিধা অসুবিধার সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অভিনেতা। টাকাও ধার দিয়েছিলেন তিনি কিন্তু কখনও তা ফেরত চাননি।
কিন্তু অভিনেতার মৃত্যুর পর মাত্র কয়েকজন সেই টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আমজাদ খানের ছেলে শাদাব জানিয়েছেন প্রযোজকদের থেকে ১কোটি ২৫ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল তার বাবা আমজাদ খানের। কিন্তু অভিনেতার মৃত্মৃত্যুর পরেও তারা সেই টাকা ফেরত দেননি। এছাড়াও এদিন শাদাব জানান তার বাবার মৃত্যুর ৪ মাস পরেই মধ্যপ্রাচ্যের এক গ্যাংস্টার (Gangster) তাঁর মা শৈলাকে আর্থিক সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমজাদ খানের স্ত্রী মুখের ওপর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন তার স্বামী কখনই আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে সাহায্য নেননি।