দাদা সাহেব ফালকের পোে ভারতীয় সিনেমাকে যদি বিশ্বের দরবারে কেউ অন্য মাত্রায় পোঁছে দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy) , তিনি বাংলা তথা সমগ্র বাঙালি জাতির গর্ব। অমন ব্যক্তিত্ব , বহুমুখী প্রতিভা , ভাবনা ,চিন্তন , আদর্শ এবং তার সঠিক প্রয়োগ আর দ্বিতীয় কেউ করে দেখতে পারেননি। আজ থেকে কয়েক দশক আগে স্বল্প কিছু সামগ্রী নিয়ে ওমন সিনেমা বানানোর দৃষ্টতা সত্যজিৎ ছাড়া আর কেই বা দেখিয়েছেন।
তাঁর কারণেই গোটা বিশ্ব ভারতীয় সিনেমার কথা জানতে পেরেছিলেন। কথিত আছে, যারা তার নির্মিত চলচ্চিত্র দেখেননি, তারা যেন সূর্য-চাঁদ দেখেননি। সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকতে ,তাঁর ছবির কদর লোকে সেভাবে বোঝেনি। আজ তিনি নেই অথচ তাঁর সমস্ত কাজ নিয়েই কাটাছেঁড়া করে আজকের প্রজন্ম পেট চালাচ্ছে।
অনেকেই হয়ত জানেন না , গোটা জীবনে মাত্র ৩২টি ছবি বানিয়েছিলেন বাংলার মানিক বাবু , আর তার মধ্যে ৩৫টি ছবির ঝুলিতেই রয়েছে জাতীয় পুরস্কারের খেতাব। সত্যজিৎ রায় একমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা যিনি অস্কার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যদিও ,আক্ষেপের কথা তাঁর কোনও ছবিই অস্কারের জন্য মনোনীত হয়নি। তার ছবিগুলো ছিল বাস্তবতার প্রতীক।
সত্যিতের বানানো ছবি দেখে মানুষ পায় বাঁচার উদ্যম, জীবন যাপনের অনুপ্রেরণা। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের প্রতি ঝোঁক তৈরী হয় যখন তিনি লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করতেন , বিদেশেই ইতালীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকার নির্মিত ‘বাইসাইকেল থিভস’ ছবিটি দেখেছিলেন তিনি। এই ছবি দেখে তিনি এতটাই অনুপ্রাণিত হন ,যে নিজেও চলচ্চিত্র বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সেখান থেকে ফিরে তিনি তার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ পরিচালনা করেন।১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই বছর এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও পান সত্যজিৎ রায়। এই ছবিটিকে আজও ভারতের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।
তারপর তিনি এই ছবির দুটি সিক্যুয়েল বার করেন , যার নাম ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’। এই তিনটি ছবিকে একত্রে বলা হয় ‘অপু ট্রিলজি ‘, এর পরেও সত্যজিৎ আরও কিছু ছবি নির্মাণ করেন যেগুলি একেকটি মাস্টারপিস। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য , পথের পাঁচালী – 1955, অপরাজিত – 1956, পরশ পাথর, জলসাঘর – 1958, অপুর সংসার – 1959, দেবী – 1960 ।