বলিউডের (Bollywood) দৌলতে বহু প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পেয়েছি আমরা। এমনই একজন বিখ্যাত অভিনেতা হলেন সদশিব আমরাপুরকার (Sadashiv Amrapurkar)। মারাঠি থেকে শুরু করে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক সুপারহিট ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে তার অভিনয় আজও সকলের কাছে স্মরণীয়। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। হাজারো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নিজেকে প্রমাণ করে তবেই বলিউডের অন্যতম সেরা খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন সদশিব অমরাপুরকর।
অভিনেতার আসল নাম গণেশকুমার নালাওয়াড়ে (Ganesh Kumar Nalawade)। ১১ই মে ১৯৫০ সালে মহারাষ্ট্রের নাসিকের আহমেদনগরে জন্ম হয় অভিনেতার। বাবা ছিলেন পেশায় অটোচালক। শুরুতে মুম্বাইতে হয় পড়াশোনা, সাথে ছোট থেকেই দারুন ক্রিকেট খেলতেন। এরপর পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় অভিনয়ের প্রতি টান জাগে। সেই সময়েই থিয়েটারের নাটকে খুনির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি টান বাড়তে থাকে। তবে নিজের নামে নয় বরং সদাশিব অমরাপুরকরের নামে পরিচিত হন তিনি। অনেকটা ছোট বয়সেই বিয়ে করে ফেলেছিলেন অভিনেতা। তবে বিয়ে করলেও নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তাই উপার্জন বলতে তেমন কিছুই ছিল না। যার জেরে বাড়িতে সমস্যা হয়েছিল। তবে চাকরিরত স্ত্রী তাকে সাপোর্ট করেছেন।
একসময় বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব বিজয় তেন্ডুলকরের দোলাতে প্রথম বলিউডের ছবি ‘অর্ধ সত্য’তে অভিনয়ের সুযোগ মেলে। অমরেশ পুরী, ওম পুরীর মত অভিনেতাদের সাথেই কাজ করেছিলেন ছবিতে। আর প্রথম ছবিতেই দুর্দান্ত অভিনয়ের জেরে নজরকাড়া সাফল্য মেলে। তারপর থেকে আর কোনোদিন ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘তেরি মেহেরবানিয়াঁ’, ‘আখরি রাস্তা’, ‘হুকুমত’, ‘কোহরাম’, ‘দুশমন দেবতা’ এর মত সুপারহিট ছবি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এমনকি বলিউডের পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও ‘ভারত এক খোঁজ’ও ‘রাজ সে স্বরাজ’ এর মত সিরিয়ালে কাজ করেছেন তিনি।১৯৯১ সালে ‘সড়ক’ ছবিতে তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় আজও আইকনিক রয়ে গিয়েছে। ছবিতে রূপান্তরকামী চরিত্রে তাঁর অভিনয় আরও বেশি খ্যাতি এনে দিয়েছিল তাকে।
এমন একজন বিখ্যাত অভিনেতার শেষ ছবি ছিল ২০১৩ সালের ‘বোম্বে টকিজ’। মেয়ে তথা পরিচালক রীমা অমরাপুরকরের কথাতেই ছবিতে ছোট্ট একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। শেষ বয়সে ফুসফুসের সংক্রমণের ফলে বহুদিন কষ্টে পেয়েছিলেন। শেষমেশ ২০১৪ সালের ৩রা নভেম্বর মাত্র ৬৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন অভিনেতা সদাশিব আমরাপুরকর।
অভিনেতার শেষ ইচ্ছামত ছোটবেলার গ্রামেই আয়োজন করা হয় শেষকৃত্যের। তবে দুঃখের বিষয় এই যে অভিনেতা মারা যাওয়ার পর তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গুটিকতক পরিচালক ও অভিনেতা বাদে ইন্ডাস্ট্রির কেউই আসেননি। তবে একটা কথা বলতেই হয়, নায়ক না হয়েও যে দর্শকদের মনে দাগ কাটা যায় সেটা কিন্তু বারে বারে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তিনি। তাই তো আজও প্রতিটা সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে অভিনয়ের মাধ্যমে জীবিত রয়েছেন অভিনেতা।