দেশব্যাপী এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা (South Indian Film)। মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে সাউথের সিনেমা গুলি। এককথায় বলতে গেলে আজকাল দক্ষিণী সিনেমাগুলি নিজেরাই নিজেদের রেকর্ড ভাঙছে। এক্ষেত্রে সবার প্রথম যার কথা বলতেই হয় তিনি হলেন দক্ষিণ ভারতীয় পরিচালক এস এস রাজামৌলি। ২০১৫ সালে বাহুবলী বক্স অফিসে যে রেকর্ড তৈরি করেছিল ২০১৭ সালে সেই রেকর্ড ভাঙে বাহুবলী ২। এরপর ২০১৮ সালে বক্স অফিসে ধামাকাদার এন্ট্রি নেয় KGF চ্যাপ্টার ওয়ান। এরপর গত বছরের শষে আল্লু খ্যাত পুষ্পা দ্য রাইজ মুক্তির পর চলতি বছরে মুক্তি পেয়েছে রাজামৌলি পরিচালিত আর আর আর। এরপর বর্তমানে বক্স অফিসের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে কেজি এফ চ্যাপ্টার ২। জানা গেছে মুক্তির প্রথম দিনেই বক্স অফিসে হিন্দি বলয়ে রেকর্ড সংখ্যক বক্স অফিস কালেকশন করেছে সুপারস্টার যশ অভিনীত KGF চ্যাপ্টার ২।
বলিউডকে টেক্কা দিতে প্রভাস, আল্লু আর্জুন, রামচরণ তেজা, জুনিয়র এনটিআর-এর পর এখন কোমর বেঁধেছেন দক্ষিণী সুপারস্টার যশ (Yash)। এখন গোটা দেশের সিনেমা প্রেমীদের সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বহু প্রতিক্ষীত সিনেমা কে জি এফ চ্যাপ্টার ২ (KGF Chapter 2)। রাজকীয় উত্থানের পর এভাবেই দেশজুড়ে দাপট দেখাচ্ছে একের পর এক দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। সাউথের সিনেমার এই ঝোড়ো ইনিংসের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একের পর এক সিনেমা। দক্ষিণী সিনেমার এই বিপুল জনপ্রিয়তার জোয়ারে নতুন করে গা ভাসাচ্ছেন গোটা দেশের সিনেমাপ্রেমীদের একটা বড় অংশ। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনা চলছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সাথেও।
শুধু তাই নয় আজকাল বলিউড অভিনেতা অভিনেত্রীরাও ঝুঁকছেন দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয়ের দিকেই। তবে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এই বিরাট বিপ্লব কিন্তু রাতারাতি ঘটেনি। পাঠকরা জানলে হযতো অবাক হবেন, বিগত তিন দশক ধরে ধাপে ধাপে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েই উত্থান ঘটেছে সাউথের এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। যার পিছনে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস। আসুন দেখে নেওয়া দক্ষিণী সিনেমার এই ত্রিস্তরীয় উত্থানের পর্যায়গুলি।
১) হিন্দি ডাবড মুভি
১৯৫৯ সালে ভারতবর্ষে টিভি আসার পর থেকে নব্বইয়ের দশকে কেবল টিভির দ্রুত প্রসার ঘটার পর মানুষের সিনেমা দেখার অভ্যাসে বিরাট পরিবর্তন আসে। সেসময় চব্বিশ ঘণ্টা সিনেমা দেখার চ্যানেল থাকলেও একঘেয়ে হিন্দি ঘরানার সিনেমা দেখে দর্শক ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাই দর্শকদের স্বাদ বদল করতে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে হিন্দিতে ডাব করা দক্ষিণের ছবি দেখানো শুরু হয়। সেই থেকেই শুরু হয় দক্ষিণী সিনেমার জয়যাত্রা। সেসময় সাউথের মানেই দর্শকদের মুখে মুখে ঘুরতো রজনীকান্ত, চিরঞ্জীবী, কমল হাসান, ভেঙ্কটেশ দাগ্গুবাতি এবং নাগার্জুন আক্কিনেনির মতো দক্ষিণী সুপারস্টারদের নাম। পরবর্তীতে তাদের সেই ধারা বহন করে চলেছেন পবন কল্যাণ, থালাপথি বিজয়, নন্দামুরি বালাকৃষ্ণ, মোহনলাল, মহেশ বাবু, আল্লু অর্জুন এবং রবি তেজার মতো অভিনেতারা।
২.বলিউডে হিন্দি সিনেমার রিমেক
সাউথের সিনেমার হিন্দিতে ডাব করার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্য করেই খানিকটা পরীক্ষা নিরীক্ষার খাতিরেই বলিউডের বেশ কয়েকজন পরিচালক সাউথের সিনেমা হিন্দিতে রিমেক করার সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বলিউডের ভাইজান সালমান খান অভিনীত সিনেমা ‘জুড়ওয়া’। এটি আসলে তেলেগু সিনেমা ‘হ্যালো ব্রাদার’-এর হিন্দি রিমেক। আসলে সাউথের এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাগার্জুন। সেসময় মাত্র ৬ কোটি বাজেটের এই সিনেমাটি আয় করেছিল ২৪ কোটি। এরপর একে একে তৈরি হতে থাকে ‘হেরা ফেরি’ ‘হাঙ্গামা’, ‘ইয়ে তেরা ঘর ইয়ে মেরা ঘর’, ‘গরম মসলা’, ‘কিঁউকি’, ‘চুপ চুপ কে’, ‘ভাগাম ভাগ’, ‘দে দনাদান’, ‘ঢোল’, ইত্যাদি সিনেমা।এ রয়েছে ‘গজনি’ সহ আরও একাধিক ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা।তবে শুধু বলিউড নয় বাংলাতেও এখনও পর্যন্ত চুটিয়ে সাউথের সিনেমার রিমেক হয়। যার মধ্যে অন্যতম হল জিৎ এর সুপারহিট সিনেমা সাথী, গেম, শত্রু, রাজা রানি রাজি,প্রসেনজিৎ এর দেবা, সোহমের অমানুষ ইত্যাদি।
৩. প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা
বলিউডে দক্ষিণী সিনেমার হিন্দি রিমেকের এই বিরাট সাফল্য দেখে তখন দক্ষিণের চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও মনে হয় তাদের তৈরি সিনেমাই যখন হিন্দি রিমেক করে বলিউডে এতটা সফল, তাহলে তারা নিজেরাই কেন না প্যান ইন্ডিয়া ফ্লিম রিলিজ করেন। এই ভাবেই প্রথবারের জন্য এক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন সাউথ ইন্ডাস্ট্রির হিট মেশিন পরিচালক এসএস রাজামৌলি। তিনিই প্রথম ২০১৫ সালে ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’ ছবিটি প্যান ইন্ডিয়াতে হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম এবং কন্নড় ভাষায় রিলিজ করেন। যা মুক্তির পর থেকে বিশ্বব্যাপী সিনেমা জগতে বিরাট রেকর্ড তৈরি করে। এরপর বাহুবলী ২,থেকে শুরু করে সম্প্রতি মুক্তি প্রাপ্ত প্রশান্ত নীল পরিচালিত ছবি ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’ পর্যন্ত এই ধারা রয়েছে অব্যাহত।