মুখখানা একেবারে কার্তিক ঠাকুরের মতো। নব্বইয়ের দশকের সুপুরুষ অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে দেখে একথাই ঘুরতো সবার মুখে মুখে। বুধবার গভীর রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা। তাঁর এই আকাল প্রয়াণে এক গভীর শূন্যতা তৈরি হয়েছে বাংলার বিনোদন জগতে, যা এককথায় অপূরণীয়।
চাইলেও কিছুতেই ভোলা যাচ্ছে না এককালের টলিউড ‘হার্টথ্রব’ এই অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা।সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই ঘুরেফিরে আসছে তাঁর নানান টুকরো স্মৃতি। বুধবার শুটিং ফ্লোরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি, এরপর শুটিং ইউনিটের লোকজনই ধরাধরি করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় তাঁকে। কিন্তু অনেক বুঝিয়েও হাসপাতালে ভর্তি করানো যায়নি তাঁকে। আর এটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে বড় আফসোসের বিষয়।
কারণ হাসপাতালে ভর্তি হলে অন্তত চিকিৎসা টুকু শুরু করা যেত, এভাবে অকালে বাংলার দর্শক হারিয়ে ফেলতেন না এমন প্রতিভাবান এক শিল্পী কে।শেষ মুহূর্তে অভিষেকের পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায় ও মেয়ে ডল। শেষ মুহূর্তগুলোয় অভিনেতা কী বলেছিলেন তাদের সাথে? শেষবারের মতো কী ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন পরিবারের কাছে?সম্প্রতি এবিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন অভিনেতার স্ত্রী সংযুক্তা।
এপ্রসঙ্গে প্রয়াত অভিনেতার স্ত্রী সংযুক্তা জানান বিগত কয়েক দিন ধরেই নাকি শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না তার স্বামীর,অসুস্থ ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। জানা ফুড পয়জানিং হয়েছিল তাঁর। তিনি স্টার জলসার দুই জনপ্রিয় ধারাবাহিক খড়কুটো এবং মোহর -এ অভিনয় করছিলেন। জানা যায় সিরিয়ালের শ্যুটে গিয়েই ওইদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। এমনকি স্টুডিয়োর বাইরেই বমি করে ফেলেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। পরের দিন রক্তচাপ অনেকটাই কমে যাওয়ায় চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে বলেছিলেন অভিনেতা। চিকিৎসক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি রাজি হননি,এরপর বাড়িতেই স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি,কারণ যারা তাঁকে স্যালাইন দিতে এসেছিলেন, তারা তাঁর হাতের শিরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
অভিষেকের স্ত্রীর কথায় ওই সময়ে ধূমপান করতে চান অভিনেতা। কিন্তু তাঁর হাত এতটাই কাঁপতে শুরু করে যে তিনি, সিগারেট পর্যন্ত ধরতে পারেননি। শেষপর্যন্ত নাকি সংযুক্তাই ধরিয়ে দেন সিগারেট। এরপর আচমকাই বেড়ে যায় অভিনেতার শ্বাসকষ্ট। এরপর যখন ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করে, তখন শেষ মুহূর্তটায় স্ত্রীর কাছে বারবার শুধু মেয়ের খোঁজ করছিলেন অভিষেক। জানতে চাইছিলেন মেয়ে ঠিক আছে কি না। এরপরেই নাকি আস্তে আস্তে কথা বলার ক্ষমতা হারান তিনি,অ্যম্বুলেন্স ডাকার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন অভিনেতা।