সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen), নামটা শুনেই আজও চোখের সামনে ভেসে আসে স্বর্ণযুগের সমস্ত সিনেমা। তাঁর প্রয়াণের পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। তবে আজও তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে দিয়েই লক্ষ লক্ষ দর্শকের হৃদয়ে অমর অক্ষয় তিনি। টলিউডে হয়তো অনেক অভিনেত্রী আসবেন ও যাবেন কিন্তু হৃদয়ের মণিকোঠায় মহানায়িকা হিসাবে থেকে যাবেন সুচিত্রা সেন।
সুচিত্রা সেনের অভিনয় নিয়ে কোনো কথাই হয় না, কিন্তু কিভাবে অভিনয়ে এসেছিলেন তিনি? শুরু থেকেই কি নায়িকা হতে চেয়েছিলেন তিনি? নাকি হটাৎ করেন অভিনয়ে এসে মিলেছিল সাফল্য! আজ মহানায়িকার অভিনয়ে আসার কাহিনী আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি। তবে তাঁর আগে বলে রাখি মহানায়িকার আসল নাম কিন্তু সুচিত্রা সেন নয় বরং রমা দাসগুপ্ত ছিল তার আসল নাম।
পাবনার কিশোরী তথা সুন্দরী রমা দেশ ভাগের সময় এসেছিলেন কলকাতায়। মধ্যবিত্ত পরিবারেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি, বিয়ে হয় সমকালীন শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের (Dibanath Sen) সাথে। মেয়েকে বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সাহতে বিয়ে দিয়ে পরিবার খুশি হলেও রমার মনের খোঁজ কেউ রাখেনি। রমা চেয়েছিল বাঙালি বৌয়ের মত সংসার করতে। একবছর পর তাদের একটি সন্তানও হয় , কিন্তু সেই সন্তান বাঁচেনি।
এরপর পরিবারের তরফে মেলে কুৎসা। তারপর স্বামী দিবানাথ সুন্দরী স্ত্রী রমাকে নিয়ে হাজির হন ষ্টুডিও পাড়ায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর কথা মত জুনিয়ার আর্টিস্ট চরিত্রে অভিনয় করে যা অর্থ পেতেন সবটাই চলে যেত দিবানাথের কাছেই। নিজের দুঃখ মনে চেপে রক্ষী স্বামীর পাশে হাসিমুখেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। একসময় শশুরমশাইয়ের দৌলতে নায়িকা হিসাবে একটি ছবি শুটিং করেন কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পেল না।
এতদিনে আবারও কন্যা সন্তানের জননী হয়েছেন অভিনেত্রী, মেয়ের নাম রাখলেন মুনমুন সেন। কিন্তু মা হওয়ার আগেই স্ত্রীকে দিয়ে অভিনয়ের জন্য আগে থেকেই মোটা টাকা নিয়ে রেখেছিলেন স্বামী দিবানাথ। তাই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায়ের মতে পাল্টে দেওয়া হয় রমা নাম। জন্ম হয় সুচিত্রা সেনের। সুচিত্রা নামেই ছবির জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান অভিনেত্রী। তবে সুপারস্টার হয়ে গেলেও নিজের রোজগারের বেশিভাগটাই স্বামীকে দিয়ে দিতেন অভিনেত্রী।
দিবানাথ চেয়েছিলেন সারাজীবন স্ত্রীকে নিজের হাতের পুতুল করেই রেখে দিতে। কিন্তু বেশিদিন এভাবে চলল না, একসময় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। ততদিনে পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি যেমন হিট তেমনি চর্চিত টলিপাড়ায়। দিন দিন সুন্দরী হয়ে উঠছে স্ত্রী অথচ বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন দিবানাথ। পর্দায় উত্তম-সুচিত্রাকে দেখে সহ্য পর্যন্ত করতে পারতেন না। একসময় অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন সুচিত্রা সেনকে। কিন্তু সামান্য ক্ষতি হলেও বেঁচে যান অভিনেত্রী। এরপর মদ্যপ স্বামীকে ছেড়ে আলাদা হয়ে যান সুচিত্রা সেন।
যদিও বিচ্ছেদ নেননি তবে সম্পর্ক প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর একদিন শুটিং চলাকালীন খবর পান স্বামী আর নেই। নিজেই সিঁদুর মুছে নিয়েছিলেন। একসময়ে সংসার নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন আজকের মহানায়িকা, কিন্ত স্বামীর জন্যই আসতে হয়েছিল অভিনয়ে। শেষ জীবনে অতন্ত্য এক হয়ে পড়েছিলেন তিনি, প্রচারের আড়ালেই থাকতে পছন্দ করতেন।