সুন্দর ঘন চুল কে না চায়! নারী হোক বা পুরুষ সকলেই চান যে তাদের একমাথা ঘন কালো চুল থাকবে। কিন্তু দিনে দিনে দূষণ আর আরো নানান সমস্যার কারণে পুরুষ থেকে শুরু করে মহিলা প্রায় সকলেই চুলের নানান সমস্যায় (Hair Problems) ভুগছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো কিশোর বয়সেই নারী পুরুষেরা অকালে চুল পেকে যাওয়ার ও চুল পড়ে যাওয়ার মত সমস্যায় (White Hair Problem) ভোগেন। যেটা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
কিন্তু আগে কার দিনে মানুষের এতো চুলের সমস্যা ছিল না। অনেকেই বলবেন হয়তো তারা বিশুদ্ধ জিনিস ব্যহাবহার করতেন। অনেকে বলবেন যে সে সময় এতো দূষণ ছিল না। তবে জানেন কি পুরোনো দিনের ঠাকুমা দিদিমাদের ঘরোয়া টোটকা মেনে চললে আজকের দিনেও চুলের নানান সমস্যার ম্যাজিকের মত সমাধান পাওয়া সম্ভব! আসুন আজ বংট্রেন্ডে আপনাদের ঠাকুমা দিদিমাদের সেই টোটকাগুলি সন্মন্ধে জানাবো যা দিয়ে চুলে উঠে যাওয়া বন্ধ হয়ে আবার নতুন করে চুল গজাতে শুরু করবে মাথায়।
আমলা তেল (Amla Oil)
আমলকি তো সকলেই চেনেন। খাবার পরে অনেকেই হজমের জন্য শুকনো বা কাঁচা আমলকি ব্যবহার করেন। কিন্তু এই আমলকি বা আমলা চুলের জন্য কিন্তু দারুন উপকারী। আমলার তেল ব্যবহার করে চুলের অনেক সমস্যার থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। যেমন অকালে চুল পরে যাওয়া, খুশকি ইত্যাদি সমস্যায় ম্যাজিকের মত কাজ করে আমলা তেল। কিভাবে ব্যবহার করবেন? তাহলে জেনে নিনঃ
- প্রথমে আমলকি থেকে বীজ বের করে নিয়ে তা মিক্সিতে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন।
- এরপর সেই পেস্ট থেকে আমলার রস ছেঁকে বের করে নিন। আর তাতে নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মেশান।
- এবার এই আমলা ও নারকেল তেলের মিশ্রণটিকে হালকা আঁচে গরম করুন। তাহলেই তৈরী আমলা তেল।
এবার এই আমলা তেল প্রতিদিন রাতে মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করতে থাকুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই সুফল পাবেন। চুল পড়াতো বন্ধ হবেই, সাথে নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।
জবা কুসুম তেল (Jaba Kusum Oil)
জবা ফুলের অনেক গুন্ রয়েছে। বিশেষত জবা ফুলের কুসুম দিয়ে তৈরী তেল চুলের জন্য বেশ উপকারী। আসুন দেখে নি কিভাবে জবাকুসুম তেল চুলে ব্যবহার করা যায়।
- প্রথমে লাল দেখে জবাফুল ও কিছু করি পাতা জোগাড় করে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
- এরপর একটি পাত্রে নারকেল তেল ভালো করে গরম করতে হবে। গরম হয়ে গেলে কারিপাতা ও জবা ফুলের নিচের বৃত্তি অংশ ছাড়িয়ে তেলের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে।
- অল্প আঁচে ১০ মিনিট ধরে টেলটিকে ফোটাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে মিশ্রণটি পুড়ে না যায়।
- এরপর মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিতে হবে। আর তাহলেই জবাকুসুম তেল তৈরী।
এরপর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে যদি মিনিট পাঁচেক এই তেল ম্যাসাজ করতে পারেন তাহলেই সুফল পাবেন। তবে, খেয়াল রাখতে হবে এই তেল খুব ঠান্ডা, তাই ঠান্ডা লাগার অভ্যাস থাকলে রাতের বদলে সকালে ব্যবহার করতে পারেন এই তেল।
মেথি তেল (Methi Oil)
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে ও চুলকে দীর্ধদিন কালো রাখতে ব্যবহার হয় মেথি তেল। আর এই তেল ব্যবহারের ফলে নতুন চুল গজায় মাথায়।
- ১ চামচ মেথি ১ চা চামচ সর্ষে নিয়ে ভালো করে গুঁড়ো করে নিয়ে অল্প পরিমানে জল মেশাতে হবে।
- এরপর এই মিশ্রনে ১ চা চামচ মত নারকেল তেল যোগ করতে হবে।
- এই মিশ্রণটি মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শেষে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
মেথির মধ্যে থাকা লেসিথিন চুলের গোড়ার জন্য বিশাল উপকারী। এটি গোড়া যা পুষ্টি যোগায় ও চুল লম্বা ও শক্ত করতে সাহায্য করে।
তুলসী পাতার তেল (Tulsi Oil)
তুলসী গাছের গুনের শেষ নেই। এই তুলসী গাছের পাতা দিয়ে তৈরী তেল চুলের যত্নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যুগ যুগ ধরে তুলসী পাতা চুলের সমস্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
- কিছু পরিমান তুলসী পাতা, লবঙ্গ, ও অল্প কিছু নারকেল তেল নিয়ে তা অল্প আঁচে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- তারপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করে ছেঁকে নিতে হবে।
- তবে হ্যাঁ, তেলটি মাথায় দেবার আগে অবশই গরম করে নিতে হবে।
মেহেন্দি পাতা (Mehendi Leaves)
এখন অনেকেই চুল রং করেন। কিন্তু আগেকার দিনে এসবের তেমন প্রচলন ছিল না। তখন চুলে পাক ধরলে বা চুলের পুষ্টির জন্য মেহেন্দি পাতা ব্যবহার করা হত। এতে যেমন চুলের রং বজায় থাকত তেমনি চুলের পুষ্টিও যোগাত।
- একটি লোহার পাত্রে অর্ধেক কাপ মত মেহেন্দি গুঁড়ো ও পরিমান মত গরম জল মিশিয়ে একটা পেস্ট মত তৈরী করতে হবে।
- এরপর তাতে পরিমান মত নারকেল তেল মিশাতে হবে।
- এই মিশ্রণটিকে মাথায় ভালোভাবে মেখে ৪০-৪৫ মিনিট মত রাখতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে।
এর ফলে আপনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছাবে ও চুল হেলদি থাকবে। যদি এটি মাসে দুবার করা যায় তাহলে দারুন সুফল পাবেন।