বাংলা অভিনয় জগৎ তথা সিরিয়ালের অতি পরিচিত মুখ হলেন শুভঙ্কর সাহা (Subhankar Saha)। একাধিক সিরিয়ালে নিজের দক্ষ অভিনয়ে ক্ষমতা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন অভিনেতা। দুর্দান্ত অভিনয়ের জেরে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন ব্যাপক। কিন্তু জনপ্রিয়তার হওয়ার পরেও ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়ে যান অভিনেতা। আসলে প্রিয়জনদের মৃত্যুর পর জীবনে একপ্রকার দিশেহারা হয়ে নেশা গ্রস্ত হয়েই শেষ হতে বসেছিল এই অভিনেতার কেরিয়ার।
একসময় ‘জড়োয়ার ঝুমকো’ সিরিয়ালে শুভঙ্করের অভিনয় দর্শকদের দারুন পছন্দের ছিল। আর ‘তুমি রবে নীরবে’ সিরিয়ালে মুখ ও বধির চরিত্রে অভিনয় যেন আরো বেশি প্রাণবন্ত ছিল। যেটা দর্শকদের থেকে জনপ্রিয়তার পাশপাশি ব্যাপক প্রশংসা এনে দিয়েছিল অভিনেতাকে। কিন্তু সেই সময় খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, অভিনেতার জীবনে একেরপর এক দুর্ঘটনার কালো ছায়া আসতে থাকে।
দুর্ঘটনায় নিজের দিদিকে হারান অভিনেতা। দিদিকে হারিয়ে শোকাহত অভিনেতা ধীরে ধীরে নতুন করে জীবনটা শুরু করার আগেই অভিনেতার মা প্রয়াত হন। জীবনের সবথেকে বড় অবলম্বন ও ভরসার জায়গা মেক হারিয়ে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েন অভিনেতা। শোক ও হতাশার থেকে মুক্তি পেতে নেশার জগতের আশ্রয় নেন। নেশা শুরু করতে দেখা গেয়ে স্নায়ুর সমস্যা।
এখানেই শেষ নয়, এরপর জীবনের শেষ ও একমাত্র সম্বল বাবাকেও হারিয়ে ফেলেন তিনি। একে একে সমস্ত প্রিয়জন জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলো। শুটিংয়ের কাজ হয়তো করতেন তবে নেশার প্রভাব বাড়তে শুরু করে ধীরে ধীরে। কাজের জায়গায় মেজাজ হারিয়ে ফেলতেন অভিনেতা। এমনকি একটা সময় অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে নিজের প্রিয়জনদেরকেই চিনতে পারতেন না শুভঙ্কর।
মানসিক ও শারীরিক উভয়ভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেতা। তবে এতকিছুর পরেও তাকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে একজন পাশে ছিল সর্বদা। তিনি হলেই শুভংকর সাহার স্ত্রী। স্বামীর খারাপ সময়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন হাত। সবার আগে স্বামীকে নেশা থেকে মুক্তি দিতে রিহ্যাবে ভর্তি করেন তিনি। একটা বা দুটো নয় সাত সাতটা রিহ্যাবে যেতে হয়েছিল অভিনেতাকে।
সর্বনাশা নেশার হাত থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রী ও বাকি প্রিয়জন থেকে শুরু করে কাজ সব কিছুই ছাড়তে হয়েছিল। তবে মনের জোর আর স্ত্রীর সাপোর্টের সাথে নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই আবারও ফিরেছেন ক্যামেরার সামনে শুটিংয়ের জন্য। বর্তমানে বরণ ও ত্রিশূল এই দুই সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে অভিনেতাকে। সম্প্রতি নিজের দশ বছরের বিবাহ বার্ষিকীতে অভিনেতা স্ত্রীর উদ্দেশ্য বলেন, ‘ও না থাকলে আমি বাঁচতাম না’।