রাত পোহালেই মহালয়া (Mahalaya)। এই দিন থেকেই আর কাজে মন বসার উপায় নেই বাঙালির। এই দিনটাতে ঘুম কাতুড়ে বাঙালিরও ঠিক ৪ টেয় ঘুম ভেঙে যায়। পরিবারের সবাই জড়ো হয় টিভির ঘরে, অথবা ধুলো ঝাড়া রেডিওতে বেজে ওঠে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র (Birendra krishna bhadra)। ঘুম ঘুম চোখে ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ শুনেই রোম খাঁড়া হয়ে যায় সারা বাংলার লোকের। যেসব বাঙালিরা প্রবাসে রয়েছেন এই দিনে তাদের মনেও দোলা দিয়ে যায় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠ।
মহালয়ার ভোর আর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র যেন সমার্থক। তাঁকে ছাড়া ‘চন্ডীপাঠ’ ভাবাই যায়না। আর ঠিক এই কারণেই স্বয়ং উত্তম কুমারকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেও দুবার ভাবেনি বাঙালি। কত অভিনেতা এলেন, আবার চলেও গেলেন কিন্তু ‘মহানায়ক’ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন উত্তম কুমারই। তার জায়গা নেওয়ার মতো প্রতিভা উত্তম কুমারের মৃত্যুর ৪ দশক পরেও মেলেনি। আজও বাঙালির হার্ট থ্রব তিনি।
আপামর বাঙালির কাছে আজও আবেগের নাম মহানায়ক উত্তমকুমার (Uttam Kumar)। ওমন দাপট, ওমন ব্যক্তিত্ব আর দ্বিতীয় বার তৈরি হয়নি। আজও তার নাম শুনলেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন বাঙালি। তার জীবনচর্চা, স্টাইল, পোশাক, ব্যক্তিত্ব সবই আজও চর্চিত।
কিন্তু বাঙালির এই মহানায়কও হেরে গিয়েছিলেন একমাত্র বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে। একবার বীরেন্দ্রর পরিবর্তে চণ্ডীপাঠ করেছিলেন উত্তম কুমার। আর তা শুনে ক্ষেপে লাল হয়ে গিয়েছিল বাঙালিরা। ১৯৮৭ সালে মহানায়ক উত্তম কুমার তখন সাফল্যের চূড়ায়, তখনই আকাশবাণীর প্রযোজনায় মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠে গলা দিয়েছিলেন উত্তম কুমার।
যদিও প্রথমে মহানায়ক বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলেন, পরে অবশ্য তিনি রাজী হয়ে যান। অনুষ্ঠানটির মান যে খারাপ হয়েছিল তা-ও নয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন সঙ্গীত নির্মাণের। সেবছর ২৩ সেপ্টেম্বর, যথারীতি মহালয়ার ভোরে বাঙালি রেডিও চালায় পরিচিত মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য। বদলে সেবার সম্প্রচারিত হয়েছিল, ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’। একের পর এক ফোন যায় বীরেন্দ্র বাবুর কাছে, বাঙালি শ্রোতাদের অভিযোগ কোন সাহসে তিনি অন্য কাউকে অনুমতি দিলেন।
শোনা যায়, আকাশবাণীর সামনে সেই সময় জড়ো হয়েছিল কাতারে কাতারে বিক্ষুব্ধ মানুষ। সেদিন বোঝা গিয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে বাঙালির আবেগ আসলে কতটা৷ সেবার বাধ্য হয়ে ফের অনুষ্ঠান পুনরায় সম্প্রচার করতে হয়েছিল। রাত পোহালেই মহালয়া, কয়েক ঘন্টা পরেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে বেজে উঠবে ‘আশ্বীনের শারদ প্রাতে’, শুরু হবে পুজো।