কবি শঙ্খ ঘোষের বিখ্যাত কবিতা ‘সঙ্গিনী’র দুটি লাইন রয়েছে ” হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়, সারাজীবন বইতে পারা সহজ নয়”। আসলে কারোর সত্যিকারের ‘সঙ্গী’ হয়ে ওঠার অর্থ উল্টো দিকের মানুষটার শুধু ভালো নয় খারাপ সময়েও পিলারের মত দাঁড়িয়ে থাকা। আর এমনই প্রেমের নজির গড়েছেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury) এবং তার প্রেমিকা (Aindrila Sharma)।
আগেই জানা গিয়েছিল, মারণ রোগ ক্যান্সারে (cancer) এ আক্রান্ত ‘জিয়ন কাঠি’ খ্যাত ঐন্দ্রিলা। যত দিন গড়িয়েছে এই রোগের সাথে তাঁর লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠেছে। এহেন অসুখে ঐন্দ্রিলার বাড়তি শক্তি, এবং সাহস হয়ে উঠেছেন তাঁর প্রেমিক। তাই এই কঠিন লড়াইটাও হাসি মুখে লড়ে নিয়েছেন অভিনেত্রী৷ একমুহূর্তের জন্য মনের মানুষটার কাছ ছাড়া হননি সব্যসাচী।
পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’ যেন তাঁর প্রেমিকাকে তুলোয় মুড়ে বুক দিয়ে আগলিয়েছেন প্রতি মুহুর্তেই। শুক্রবার ঐন্দ্রিলা ও তাঁর এই লড়াই নিয়ে ফেসবুকে লম্বা একটি লেখায় বর্ণনা করেছেন তাঁদের এই যুদ্ধ বৃত্তান্ত। ঐন্দ্রিলার অসুস্থতার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে চিন্তিত গোটা ইন্ডাস্ট্রি, তথা অভিনেত্রীর অনুরাগীরা। প্রতি মুহুর্তেই সব্যসাচীকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় , “কেমন আছেন ঐন্দ্রিলা?”
আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই অভিনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে লম্বা পোস্ট লিখলেন অভিনেতা৷ সব্যসাচীর লেখায় ফুটে উঠেছে প্রেমিকাকে নিয়ে তাঁর আশঙ্কার ছাপ। তিনি লিখেছেন, ”আমি কাউকেই বিশেষ কিছু বলি না, আসলে ভালো আছে বলতে আমার ভয় লাগে। সত্যি বলতে, চোখের সামনে আমি যা দেখেছি এবং নিয়মিত দেখছি, সেটাতে ভালো থাকা বলে না, সেটাকে অস্তিত্বের লড়াই বলে। অবশ্য এইসব খটোমটো কথা কেবলমাত্র আমিই বলি, ওকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তাহলে এক গাল হেসে উত্তর দেবে “খুব ভালো আছি, আমার রাশিফল ভালো যাচ্ছে।”
অভিনেতা জানিয়েছেন আধখানা ফুসফুস বাদ পড়েছে ঐন্দ্রিলার। আর আধখানা নিয়েই রোজ বেচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রেমিকার এই অসহ্য কষ্ট দুচোখে দেখা যায় না যেন। তবু তিনি লিখছেন, ”আমি শুধু দাঁতে দাঁত চিপে আগলাতে পারি, আমি শুধু বুঝি, গোল না খাওয়া মানে জিতে যাওয়া।”
সব্যসাচী আরও লিখেছেন, ”যা বুঝলাম, এই অসুখটার কোনো নিয়মবিচার নেই, ওষুধপত্র সবই আছে অথচ নেই, চিকিত্সার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আছে কিন্তু আরোগ্যের নেই। কথা ছিল সেপ্টেম্বর অবধি চিকিত্সা চলবে, ক্রমে সেটা গুটিগুটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডিসেম্বরে। প্রতিবার যখন ডাক্তার বলেন চিকিত্সার সময় বাড়াতে, ওর মুখটা যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যায়। প্রতিবার কেমো নেওয়ার পর কয়েক রাত অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করে। শুয়ে থাকলে মনে হয়ে বুকে পাথর চেপে বসছে, আবার উঠে বসলে শ্বাস নিতে পারে না। রক্তচাপ মাঝেমধ্যেই ৮০/৪০ এ এসে ঠেকে। খাওয়ার ইচ্ছা এবং স্বাদ চলে যায়। আধখানা ফুসফুস বাদ যাওয়াতে সবটাই বড় কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একপ্রকার অচেতন করে রাখা হয় ওই কয়েকটা দিন। তবে বাকি দিনগুলিতে দিব্যি ঠিক থাকে, পুজোর জন্য অনলাইন শপিং, আমার ওপর হম্বিতম্বি, লেজওয়ালা বাচ্চাদের তদারকি, সবটাই পরিপাটি করে পালন করে”।