বহু বিপ্লব, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই অগাস্ট স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল ভারতবর্ষ। আজ ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস ( Independence Day) । এই দিনে মাথা উঁচু করে পতপত করে উড়েছিল তেরঙ্গা পতাকা৷ আমাদের পতাকা তিনটি রঙে সজ্জিত গেরুয়া, মাঝে সাদা, নীচে সবুজ। মাঝখানে নীল অশোক চক্র। কিন্তু এই জাতীয় পতাকাতেই (National flag) বদল আনতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। অবশ্য এর পেছনে তাঁর অকাট্য যুক্তিও ছিল। সত্যজিৎ গবেষক দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় তুলে ধরলেন সেই ইতিহাস।
দেবাশিষ বাবুর মতে, ১৯৬৭ পরবর্তীতে সময়কালে ভারতের জাতীয় পতাকায় কিছু পরিবর্তন আনার জন্য তৎকালীন প্রধাণমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বয়ং পরামর্শ চেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের থেকে৷ ভারতের জাতীয় পতাকার প্রথম নকশা তৈরি করেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা৷ আয়তাকার সেই পতাকা ছিল লাল রঙের, বন্দেমাতরম লেখা ছিল, তার মাঝখানে ছিল হলুদ বজ্র চিহ্ন এবং পদ্মফুল। চারিদিকে ১০৮ টি অগ্নিশিখা৷
এরপর ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সবুজ হলুদ লাল দিয়ে পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু৷ এরপর মাদাম কামা একটি পতাকার নক্সা তৈরি করেন। কিন্তু এই পতাকা গুলির কোনোটিই ভারতের সার্বভৌমত্বকে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিলনা। সেই সময় একাধিক বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পতাকা ঘিরে৷
অনেকেই পতাকার নক্সা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। দেবাশীষ বাবুর মতে, ১৯৩১ সালের ২রা এপ্রিল কংগ্রেস ৭ সদস্য মিলে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। তখন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া তিন রঙের পতাকা তৈরি করেন, যা এখনকার পতাকার উত্তরসূরী। তবে সেই পতাকায় অশোক চক্রের বদলে ছিল চরকা।
কিন্তু ভারতের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের পর ১৯৬৭ সাল নাগাদ কংগ্রেসের পতাকার সঙ্গে জাতীয় পতাকার মিল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সোশ্যালিস্ট দলের নেতা রামমোহন লোহিয়া। তখনই ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন শিল্পীদের কাছে পরামর্শ চান। এই ব্যাপারে সত্যজিৎ রায়ের সাজেশন ছিল, পতাকার উপরে নীচে দুটি গাঢ় রং গেরুয়া এবং সবুজ মাঝে সাদা জায়গায় অশোকচক্র৷ সেক্ষেত্রে অশোকচক্র একটু চ্যাপটা লাগে, তাই তার নক্সায় চক্রের ওপর-নীচ যদি একটু কার্ভ করে দেওয়া যায়, তা হলে অশোকচক্রটি সম্পূর্ণ বৃত্তাকার মনে হবে।
ছবি ঋণ- দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়