বাংলা টেলিভিশন জগতের এক জনপ্রিয় নাম হলেন ভাস্বর চ্যাটার্জী (Bhaswar Chatterjee)। দশাধিককাল ধরে একের পর এক নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে তাঁর অভিনীত লোকনাথ (Loknath) চরিত্রটি দর্শক মনে এমনভাবে দাগ কেটেছে যে সিরিয়াল শেষ হয়ে গেলেও পর্দার বাইরে এখনও অনেকের কাছেই তিনি লোকনাথ নামেই পরিচিত। অভিনয় জগতের মতোই বর্ণময় অভিনেতার ব্যাক্তিগত জীবন। যা একসময় ভিতরের ভাস্বর চ্যাটার্জীকেই একেবারে ভেঙেচুরে রেখে দিয়েছিল।
ব্যাক্তিগত জীবনের অন্ধকার দিক সম্পর্কে ভাস্বরের বক্তব্য ‘আমারও খুব ইচ্ছে ছিল, ঘর-সংসার হবে। দু’বার চেষ্টা করেছি, দু’বার-ই ঘর ভেঙেছে। যত বার ভেঙেছে, আমি হাহাকার করেছি।’ তবে এখন সেসব অতীত। পর পর দুবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া, মানসিক অবসাদ (Mental Depression) থেকে শুরু করে আত্মহত্যার চেষ্টা। একসময় জীবনের এমনই নানান অন্ধকার দিক কাটিয়ে এসেছেন অভিনেতা। তবে এখন তিনি অনেক পাল্টে গিয়েছেন। এখন তিনি নিজেকে ভালোবাসেন। দেরীতে হলেও তিনি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন ‘নিজেকে ভালবাসা মানে জীবনকে ভালবাসা। দেখলাম, তাতে ষোলআনা লাভ। জীবনবিমুখ ভাস্বর আবারও জীবনমুখী হল। ‘
তাই অভিনেতার কথায় ‘২০১৯-এর ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় আর ২০২১-এর ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। ২০১৯-এর ভাস্বরকে যাঁরা খুব কাছে থেকে দেখেছেন তাঁরা জানেন, তখন আমার ভয়ানক অবস্থা।’ আসলে সেসময় দু-দুবার সংসার ভেঙে যাওয়ার পর ভীষণ ভাবে একা হয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা। শুটিংয়ের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার অবসাদ জাঁকিয়ে ধরতো তাঁকে। এমনকি একটা সময় তাঁর এমনও হয়েছে ১৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিলে কেমন হয়?
এরপর গতবছরের ১৪ জুন সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনা আরও নাড়িয়ে দিয়ে যায় তাঁকে। সেসময় সংবাদপত্রে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কলম ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু সেসময় তিনি নিজেও সম্পূর্ণ অবসাদমুক্ত হতে পারেননি। অবসাদগ্রস্ত হয়ে একটানা ৯ মাস কাটানোর পর হঠাৎ একদিন তিনিই নিজেই সিদ্ধান্ত নেন এভাবে এত সহজে হার মানবেন তিনি। এরপর মনোবিদের সাথে যোগাযোগ করেন ভাস্বর।
অভিনেতার কথায় ‘অবসাদ আর মন খারাপ এক জিনিস নয়। মনখারাপ একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত থাকে। অবসাদ মানব সত্তাকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়। ‘ তাই অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে একসময় তিনি উপলব্ধি করলেন নিজেকে ভালোবাসা প্রয়োজন। আর সেই জন্যই অভিনয় ছাড়াও সারাক্ষণ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখেন তিনি। কখনও নতুন ভাষা শিখছেন আবার কখনও ছোট ছবি পরিচালনা করছেন। এছাড়াও মায়ের নামে তৈরি অপর্ণা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাই সবশেষে বলতে হয় একজন অভিনেতার এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা আজকের দিনে যে কোনো মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবে।