ভারতের বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হল দেব। তিনি আজ আট থেকে আশি সকলের মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছেন নিজের কর্মকুশলতা দিয়ে। আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছালেও অভিনেতার ছোটবেলা কেটেছে অসংখ্য চড়াই-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে।
১৯৮২ সালে ২৫ শে ডিসেম্বর কেশপুরের মহেশখালি নামক গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব অধিকারী। তার বাবার নাম গুরু অধিকারী ও মা মৌসুমী অধিকারী। দেবের একটি বোন রয়েছে দীপালী অধিকারী। তার শৈশব কেটেছিল মামার বাড়িতে, চন্দ্রকোনায়। পরিবারে সবাই তাকে রাজু নামে চেনে। পরবর্তী কালে পড়াশুনোর জন্য মুম্বাইয়ে চলে যান। মুম্বাইয়ের বন্দ্রার পুরস্তম হাই স্কুল পড়াশুনো করেন। এবং পরবর্তীকালে পুনের ভারতীয় বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী অর্জন করে।
অভিনেতা দেব শিশুকাল থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। এর জন্যই ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করার পর থেকেই অভিনয় জগতে আসার জন্য অভিনয় শিখতে শুরু করেন। প্রথমে তার কপালেও জুটেছে অসংখ্য প্রতাখ্যান। অথচ আজ এক যুগের বেশি সময় ধরে টালিগঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভিনেতা।
কিন্তু এতদিন হয়ত আসাই হতনা তার। তখন অভিনেতা হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছেন। হঠাৎ টালিগঞ্জের এক প্রডিউসারের ডাক পান দেব,সেই জন্যেই তরিঘরি মুম্বই থেকে কলকাতা আসছিলেন তিনি। মাঝপথে হঠাৎ নাগপুর স্টেশনে ফোন আসে সিনেমাটা হচ্ছেনা। ট্রেন থেকে নেমে যেতে হয় এরপর। স্বপ্নটা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো, কিন্তু হাল ছাড়েননি দেব।
এরপর ২০০৫ সালে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করে অগ্নিশপথ সিনেমার হাত ধরে। এটি ছিল তার বাংলা সিনেমা জগতে প্রথম ডেবিউ। এই সিনেমায় তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তার সহঅভিনেত্রী ছিলেন রচনা ব্যানার্জী। যদিও সিনেমাটি সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ ছিল। বলাই বাহুল্য ২০০৭ সালে তার জন্য লাকি বছর ছিল। কারন সেই সালে তার দ্বিতীয় হিট ছবি শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত রবি কিনাগীর পরিচালিত “আই লাভ ইউ”। এই ছবিতে দেবের বিপরীতে কাজ করেন পায়েল সরকার। সিনেমাটি বক্স অফিসে হিট ছিল। এই সিনেমাটির মাধ্যমে দেবকে ধীরে ধীরে দর্শক চিনতে শুরু করে।
আই লাভ ইউ সিনেমা ভালোভাবে আর্থিক সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও অভিনেতা এক বছর কোন ছবির অফার গ্রহণ করেন নি। শোনা যায় এই এক বছর তিনি মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে আরও ভালোভাবে অভিনয় জগতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মুম্বাইয়ে গিয়ে তিনি বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার এজাজ গুলাবের কাছ থেকে ফাইটিং এবং নাচে শেখেন নিজেকে প্রশিক্ষিত করার জন্য।
মুম্বাইয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হওয়ার পর কলকাতায় ফিরে আসে এবং অভিনয় জগতে অভিনয় শুরু করেন। তবে ২০০৮ সালে তার কামব্যাক ছিল অসাধারণ। মুম্বাই প্রশিক্ষিত হয়ে ২০০৮ সালে রবি কিনাগী পরিচালিত “প্রেমের কাহিনী” ছবিতে তাকে দেখা যায় । তার বিপরীতে ছিলেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো বাণিজ্যিক সাফল্য পায় । এবং সেই সালেই আরও একবার কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে তাকে জুটিতে “ মন মানে না” সিনেমায় দেখা যায়।
২০০৯ সালে জ্যাকপট সিনেমায় একটি অন্য চরিত্রে দেবকে দেখা যায়। এবং সেই সালেই দেবের মুক্তি প্রাপ্ত সুপারহিট সিনেমা রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত “চ্যালেঞ্জ”। এই সিনেমায় প্রথমবার তাকে দেখতে পাওয়া যায় প্রাক্তন প্রেমিকা শুভশ্রী গাঙ্গুলির সঙ্গে জুটি বাঁধতে। বলাই বাহুল্য তাদের জুটি এবং সিনেমা দর্শকের মনে প্রানে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিল। সিনেমা হলের সামনে দেবের ছবি নিয়ে দর্শকদের মাতামাতি কিছু কম ছিল না। অ্যাকশন-রোম্যান্স কম্বিনেশন এই ছবিতে প্রচুর সাফল্য অর্জন করেছিল। এবং এরপর থেকে দেবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় অনেকগুণ। এই ছবিটির জন্য আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ডস থেকে সেরা অভিনেতা এবং সেরা অ্যাকশন হিরোর পুরস্কার লাভ করে।
এরপর থেকে অভিনেতা দেব একের পর এক ভালো পারফরমেন্স করে গেছেন। একাধিক সিনেমা দর্শকদের দিয়েছেন এবং তার হিট সিনেমাগুলির মধ্যে পরান যায় জলিয়া রে, বলো না তুমি আমার, দুই পৃথিবী, পাগ্লু, পাগ্লু ২, রোমিও, খোকা ৪২০, চাঁদের পাহাড়, বুনো হাঁস, আরশিনগর, ককপিট, কাবির বক্স অফিসে ভালো সাফল্য অর্জন করেছে। আর এখন তিনি কেবল অভিনেতা নন, মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসায় জননেতাও হয়ে উঠেছেন