বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়কে (Debashree Roy) চেনেননা এমন লোক নেই। ৯০ এর দশকের তাবড় এই অভিনেত্রীর অভিনয়ে মুগ্ধ ছিল ৮ থেকে ৮০। একসময় টলিউডের সিনেমায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অভিনেত্রী। ভালোবাসা ভালোবাসা, দাদার কীর্তি, মেজদিদি, প্রতিকার ইত্যাদির মত একাধিক ছবি আজও বাঙালির প্রিয় সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নেয়। অবশ্য মাঝে দীর্ঘদিন অভিনয় ছেড়ে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে নিজের এই ভুল বুঝতে পেরেছেন অভিনেত্রী। তাই রাজনীতি ছেড়ে পুনোরায় ফিরছেন অভিনয়ের জগতে।
সম্প্রতি জি বাংলার ‘সর্বজয়া’ সিরিয়ালের মধ্যে দিয়ে অভিনয় জগতে ফিরেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার পর ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর এখন বয়স হয়েছে তাই তাকে এখন আর সিরিয়ালের বৌমার চরিত্রে মানায় না। এই নিয়েই তৈরী হয়েছে নানা ধরণের মিম ছবি।
অভিনেত্রীর রক্তলেখা ছবির একটি বিখ্যাত গান হল ‘আমি কলকাতার রসগোল্লা’। এই গানের সুর নিয়েই ট্রোল করা হয়েছে অভিনেত্রীকে। অভিনেত্রীর অভিনীত অন্যতম জনপ্রিয় গানের ছবি দিয়েই তৈরী হয়েছে মিম। ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘ রূপ নিয়ে অহংকার কোরো না মাসি, ৯০ এর সেরা রসগোল্লাও আজ বাসি’। এই মিমটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার হতেই ব্যাপকভাবে ভাইরালও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
এমন কিংবদন্তী অভিনেত্রীর সঙ্গে হয়ে চলা দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)। শ্রীলেখা দেবশ্রী রায়কে ‘প্রিয় চুমকি দি’ বলে সম্বোধন করে জানালেন, ” বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, তোমায় নিয়ে নোংরামি হচ্ছে। ইচ্ছে করেই মুখ খুলিনি। নোংরামিকে পাত্তা দেব না বলে। তুমি অভিমান করে লিখেছ, ‘একজন অভিনেত্রীও মুখ খুললেন না’, তাই আমি মুখ খুললাম”।
শ্রীলেখা দেবশ্রীকে সেই নেটিজেন সহ সেই সব অভিনেত্রীদের উপর ঘৃণা উগরে দিয়ে জানিয়েছেন, ‘কাদের থেকে আশা করো? এখন অভিনেত্রীরাই অভিনেত্রীদের শারীরিক গঠন, খামতি নিয়ে কথা বলে মজা পান! ওঁদের এ সবে কিচ্ছু যায়-আসে না।’
শ্রীলেখা জানান চুমকি দি ওরফে দেবশ্রী রায় তার কাছে বড়ই আদরের এবং সম্মানের। অনেক কিছুই শিখেছেন তিনি তার থেকে। তাই প্রিয় চুমকি দিকে শ্রীলেখা পরামর্শ দিয়ে আরও বলেছেন, কাউকে ক্ষমা না করতে। পাত্তা না দিতে এবং মনখারাপ না করতে।
তার মতে, ওরা জানেনা বোঝেই না, কত ব্যথা, অপমান লুকিয়ে তুমি দেবশ্রী রায় হয়েছ। কত চোখের জল মুছে আমরা যে যার মতো করে পরিচিতি পেয়েছি। আসলে ওরা আমাদের হিংসা করে। ঈর্ষাও করে। ভয় পায়। রেগে যায়। ওদের প্রশ্ন, আমরা কেন এত পাব? সেই জ্বালা, সেই নিরাপত্তাহীনতা, হীনমন্যতা থেকে ওরা আমাদের অপমান করে। আমাদের মই বানিয়ে এরা আসলে জনপ্রিয়তার সিঁড়িতে চড়তে চায়। সেই জায়গা থেকে বয়স নিয়ে, রূপ নিয়ে, শরীর নিয়ে কটাক্ষ ছোড়ে। মূল্যবোধ, মানুষকে সম্মান দেওয়ার অনুভূতিটাই আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। এরা বোঝে না, এক দিন এদেরও বয়স হবে। তোমার ‘কলকাতার রসগোল্লা’ একটা সময় সবার মুখে মুখে ফিরত। আজ সেই গান দিয়ে তোমায় অপমান! সত্যিই কিচ্ছু বলার নেই।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই অভিনেতা ভাস্বর চ্যাটার্জী (bhashwar chatterjee) ট্রোলারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের কি এই ধরণের মন্তব্য ও ব্যবহার প্রাপ্য? আমরা কি পঞ্চাশের সালমান খান ও শাহরুখ খানকে অর্ধেক বয়সের অভিনেত্রীদের সাথে রোমান্স করতে দেখিনি? দাদু নাতিনী প্রেম করছে বলে কি আমরা সরব হই? নাকি আজে বাজে ভাষায় তাকে আক্রমণ করি। দেবশ্রী রায় ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক অনেক দিয়েছেন, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এনে দিয়েছেন’। অভিনেত্রীর জন্য সরব হয়েছেন অভিনেতা জয়জিৎ ব্যানার্জিও।