মনোজ বাজপেয়ী (Manoj Bajpayee) নামটা বিগত কয়েকদিনে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মুখে মুখে। সম্প্রতি অভিনেতার বহু অপেক্ষিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ২ (The Family Man 2)’ রিলিজ হয়েছে। সেখানে শ্রীকান্ত তিওয়ারির ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন অভিনেতা। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ১’ এর যতটা জনপ্রিয়তা ছিল সেটাকেও ইতিমধ্যেই ছাপিয়ে গিয়েছেন অভিনেতা।
বর্তমানে একজন ভালো মানের অভিনেতা হিসাবে সকলেই তাকে চেনেন। কিন্তু অভিনেতার জীবনের শুরুটা ছিল একেবারেই সাধারণ ঘরের থেকে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা নিজের জীবনের অজানা কাহিনী তুলে ধরেছেন দর্শকদের কাছে। আজ মনোজ বাজপেয়ীর জীবনের অজানা কাহিনীই তুলে ধরব বংট্রেন্ডের পর্দায়।
বিহারের বেলওয়াহ নামক এক এলাকার কৃষক পরিবারের সন্তান মনোজ বাজপেয়ী। আবার ছিলেন নিম্ন মধ্যবর্গীয় এক চাষী। মোট অভিনেতাকে নিয়ে মোট ছয় ভাইবোন তারা। অভিনেতার বাবার ১৫ বিঘা জমি ছিল সেখানে চাষাবাদ করতেন তার বাবা। তবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। অভিনেতা আরো বলেন, তার বাবা নিজেও গ্রাডুয়েট ছিলেন তাই সকলকে একটাই কথা বলতেন যদি কিছু করতে হয় তাহলে আগে গ্রাজুয়েট হও তারপর যা করার করো।
আসলে অভিনেতার বাবা নিজে একজন ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় ডাক্তারি পড়ার খরচ ছিল ৫ লক্ষ টাকা যেটা পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। অভিনেতা এরপর আরো জানান যে তারা মূলত বোর্ডিংয়ে থেকে পড়াশোনা করতেন। তবে ছুটিতে বাড়ি ফিরলে বাবার সাথে খেতে ট্রাক্টর চালানো থেকে শুরু করে খেত চষা সবই করতেন। একা তিনি নন বরং সকল ভাইয়ের জন্যই নিয়ম এক ছিল।
সকল ভাইদের মত মনোজ বাজপেয়ীও ট্রাক্টর চালানো থেকে শুরু করে খেত চষা যদিও জানেন। তবে অভিনেতা চাষাবাদের দিকে খুব একটা পারদর্শী ছিলেন না। কারণ তার মন লাগত না এই সব দিকে। অভিনেতার মতে তিনি মনে করেন যে তিনি অভিনেতা হবার জন্যই জন্ম নিয়েছেন। খুব ছোট বেলাতেই বোর্ডিংয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি, তবে ক্লাস ৫এই মনে মনে ঠিক করেছিলেন হলে অভিনেতাই হবেন।
মনোজ বাজপেয়ীর ছোটবেলায় খানিক চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন। কিন্তু একদিন ক্লাসের টিচার তাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে কবিতা পাঠের জন্য বলেন ও প্রতিদিন তাকে শেখাতেন কি করে বলতে হয় কি করে করতে হয়। সেখান থেকেই তার অভিনয়ের হাতেখড়ি বলে মনে করেন তিনি।
অভিনেতা ছোট বেলা থেকেই অভিনেতাদের সাক্ষাৎকার পড়তেন, নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, রাজ বব্বর এর সাক্ষাৎকার সম্পর্কে পরে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে সকলেই রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয় থেকেই অভিনয় শিখেছেন। তাই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন যে গ্রাজুয়েশনের পর সেখানেই যাবেন তিনি। এরপর বিনা টিকিটেই দিল্লি পৌঁছেছিলেন অভিনেতা টিটিকে কোনোমতে ধোকা দিয়ে।
এরপর স্ট্রিট থিয়েটার থেকে শুরু করে নানা জায়গায় অভিনয়ের জন্য চেষ্টা করতেন। এরপর একসময় ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেতা, বন্ধুদের মনে হয়েছিল আত্মহত্যা না করে ফেলেন এরপর ন্যাশনাল স্কুল ওফ ড্রামায় একটি ওয়ার্কশপে জয়েন করেন। সেখানে মাত্র ১দিন যেতে পারেননি তিনি বৃষ্টির জন্য। তা সেখানে দারুন পারফর্মেন্স করতে শুরু করেন। তিনবছর কড়া পরিশ্রমের পর যখন তিন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে যান তখন সেখানে একজন ছাত্র নয় বরং এজন শিক্ষক হিসাবে জয়েন করেন।
জানলে হয়তো অবাক হবেন এতবড় মাপের অভিনেতা হলেও মেকাপের সময় আয়নায় মুখ দেখতে পারেন না তিনি। এমনকি আজও যেকোনো ছবিতে বা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার আগে মেকআপ রুমে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে তিনি আয়নায় নিজের মুখ দেখেন না। তবে অভিনেতার অভিনয় যে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।