‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?’ অঞ্জন দত্তের (Anjan Dutta) গাওয়া কিছু লাইন যেন প্রতিটা উর্তী বয়সের পুরুষ মনের কথা বলে যায় একটা গানের মধ্যে দিয়েই। গানের ‘হ্যালো, এটা কি ২৪৪১১৩৯ বেলা বোস তুমি পারছ কি শুনতে?’ এই লাইনটা শোনেনি এমন ছেলে হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল আজকের দিনেও। কখনো ঘুম ভাঙতেই সকালের রেডিওতে তো কখনো রাতের বেলায় অন্ধকার ঘরে কানে হেডফোন দিয়ে একান্তে গানটি বারবার শুনতে ইচ্ছা করে।
১৯৯৪ সালের রিলিজ হওয়া অঞ্জন দত্তের এই গান ২০২১ এও একেবারে সমান জনপ্রিয়। কথায় আছে প্রতিটা শিল্পী কিছু না কিছু থেকে অনুপ্রেরণা নেন। তাহলে কি বেলা বোস সত্যি? অঞ্জন দত্তের জীবনেই কি ছিল বেলা বোস? আর ২৪৪১১৩৯ এই নাম্বারটাই কেন ব্যবহার করা হল গানে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিশ্চই একটি বার হলেও আপনার মনে এসেছে। আজ এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়েই হাজির হল বংট্রেন্ড।
সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে বেশ খানিকটা অতীতে। সালটা ১৯৯৪ আজকের মত স্মার্টফোন ছিল না তখন মোবাইল শব্দটাই ছিল স্বপ্নের মত। সেই সময় কলকাতায় প্রচলিত হতে শুরু করেছিল ল্যান্ডলাইন টেলিফোন। আর যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসাবে নানান রাস্তার মোড়ে দেখা মিলত টেলিফোন বুথের। সেখানে কয়েন ফেলে নাম্বার ঘোরালেই ওপারে শোনা যেত কাঙ্খিত মানুষের কণ্ঠস্বর। এই টেলিফোন বুথ থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন অঞ্জন দত্ত।
তবে, আজকের মত প্রযুক্তির উন্নতি হয়নি সে সময়ে, বহুবার কল করলে হয়তো অনেক কষ্টে পাওয়া যেন লাইন। তাই সেই টেলিফোন নিয়েই লেখা হল গান। টেলিফোন নিয়ে গান আর নাম্বার থাকবে না তাও আবার হয় নাকি! ৯৪ সালে ৬ সংখ্যার টেলিফোন নাম্বার প্রচলিত ছিল। তাই ১টি সংখ্যা বাড়িয়ে ৭টি সংখ্যা দিয়েই তৈরী হল ২৪৪১১৩৯। এরপর গানের অ্যালবাম রিলিজ হবার পর সকলের মুখে মুখে রটে গেল নাম্বার। এমনকি এখনো যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যাবে ২৪৪১১৩৯ বেলা বোসের ফোন নাম্বার।
https://youtu.be/xNAole2HCIY
কিন্তু মজার বিষয় হল প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে চাহিদা বাড়তেই ৬ সংখ্যা থেকে ৭ সংখ্যা হল টেলিফোন নাম্বার। আর ৭ সংখ্যা হবার পরেই অস্তিত খুঁজে পাওয়া গেল বেলা বোসের টেলিফোন নাম্বারের। যেমনটা জানা যায় এক হিন্দি সংবাদপত্র ‘দৈনিক বিশ্বামিত্র’ এর অফিস বা সন্মাদকের বাড়ির ফোন নাম্বার হয় বিখ্যাত নাম্বার ২৪৪১১৩৯। এরপরেই শুরু হয় ফোন আসা, সকাল থেকে রাত নানান সময়ে অজস্র ফোন আসতেই থাকে।
অতিরিক্ত ফোন আসায় বিরক্তি প্রকাশ করেন সংবাদ মাধ্যম কর্তৃপক্ষ। এমনকি এতটাই ফোন আসতে শুরু করেছিল যে অঞ্জন দত্ত নিজে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে নিছক ছন্দ মেলানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছিল ২৪৪১১৩৯ এছাড়া আর কোনো অভিপ্রায় ছিল না তার। তবে বাঙালির হৃদয়ে ততদিনে গেঁথে গিয়েছিল বেলা বোস আর তার ফোন নাম্বার। তাই ৯৪ থেকে ২০২১ ২৭ বছর পেরিয়েও এখন সমান জনপ্রিয় বেলা বোস।