মাত্র ১৩ বছর বয়সে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) সঙ্গে পর্দায় জুটি বাঁধেন শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore) । সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন শর্মিলা। আজও সেই সৃষ্টি অমলিন। যতবারই ‘পথের পাঁচালি’ দেখুন না কেন, তা পুরোনো হবার নয়। ২০২০ সালেই পরলোকগমন করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি অর্থাৎ অপু। পর্দার স্বামী নয় আজ আলোচনার বিষয় শর্মিলা ঠাকুরের বাস্তব জীবনের বৈবাহিক সম্পর্ক।
ক্রিকেটের জগতের সঙ্গে বিনোদন জগতের ওঠাবসা আজকের নয়। সেই ৯০ এর দশক থেকে আজ অবধিও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিরাট কোহলি, অনুষ্কা শর্মা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। শর্মিলা ঠাকুর মনসুর আলি খানের প্রেমও এই ধরণেরই। একজন মাঠ কাঁপান ছক্কা হাঁকিয়ে তো অন্যজন মাতান রূপোলি পর্দা।সালটা ১৯৬৫ কোনো একটি ক্রিকেট ম্যাচে গিয়েই এই দুই জুটির আলাপ হয়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপটেন তখন ছিলেন নবাব পতৌদি।প্রথমে আলাপ তারপর প্রায় ৪ বছর প্রেম করেন শর্মিলা-মনসুর।
ঠাকুর পরিবারের মেয়ে হয়েও প্রথম থেকেই স্টিরিওটাইপ ভাঙতে শুরু করেন শর্মিলা ঠাকুর। বলিউড থেকে টলিউড সবখানেই তখন অভিনেত্রীর তুমুল জনপ্রিয়তা। অনেকেই শর্মিলার পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেছিলেন। ঠাকুর পরিবারের মেয়ে হয়ে তিনি কীভাবে অন্তর্বাস পড়ে পর্দার সামনে আসবেন! কিন্তু তাঁর প্রাণপুরুষ টাইগার তাকে সমর্থন করেছিলেন।
ভিন ধর্মে বিয়ে নিয়ে শর্মিলা ঠাকুরের পরিবারে ছিল যথেষ্ট আপত্তি। কিন্তু প্রেমের জন্য নিজের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি সবই ত্যাগ করলেন শর্মিলা। হয়ে উঠলেন বেগম সুলতানা। হিন্দু ও ইসলাম দুই মতে বিয়ে করলেন টাইগার ও শর্মিলা। এক্কেবারে প্যারিসে গিয়ে শর্মিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন টাইগার। ১৯৬৯ সালে বিয়ে হয় এই দুই গ্ল্যামারাস জুটির। একদিকে বিয়ে অন্যদিকে তার ছবি ‘আরাধনা’ সাফল্যের শীর্ষে।
একদিকে তুখোড় খেলছেন মনসুর, অন্যদিকে অভিনয় জগতে তরতরিয়ে উঠছে শর্মিলা ঠাকুরের সাফল্যের গ্রাফ। বিয়ের পর তিন সন্তানের মা হন বেগম শর্মিলা। একদিকে সংসার অন্যদিকে রুপোলী জগত। দুটোই ব্যাল্যান্স করে চলতে পেরেছিলেন বলেই দিতে পেরেছিলেন ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘সফর’, ‘অমর প্রেম’, ‘দাগ’, ‘চুপকে চুপকে’ সহ একাধিক হিট সিনেমা।অবশেষে ২০১১ সালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান নবাব।তারপর থেকে শর্মিলা দেবীকেও আর বিশেষ পর্দায় দেখা যায়নি।