আজ থেকে ২৫ বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বলিনায়িকা (Bollywood) জুহি চাওলা (Juhi Chawla) ও খ্যাতনামা ব্যবসায়ী জয় মেহতা (Jay Mehta)। যদিও শুরুটা একেবারেই সুখকর হয়নি দু’জনের জন্য। প্রথম প্রথম জয়কে ‘বুড়ো লোক’ ও জুহিকে ‘অর্থলোভী’ বলে দাগিয়ে দেয় তৎকালীন সমাজ, কিন্তু সবার মুখ বন্ধ করে তাঁরা প্রমাণ করেন যে তাঁদের সম্পর্ক অটুট।
রুপোলি পর্দার সর্বকালের সুন্দরী নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা (Juhi Chawla)। নব্বইয়ের দশকে তাঁর অভিনয় ও নজরকাড়া হাসির প্রেমে পড়েননি, এমন তরুণ খুব কমই ছিল। অবশেষে ১৯৮৪ সাল নাগাদ জুহির ঝোলায় আসে ‘মিস ইন্ডিয়া’ (Miss India) খেতাব। তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে জুহির নাম। ১৯৮৮ সালে আমির খানের (Aamir Khan) বিপরীতে ‘কায়ামত সে কায়ামত তাক’ (Qyamat Se Qyamat Tak) ছবিতে অভিনয় করে সকলকে অবাক করে দেন জুহি।
নিজের সিনেমাজীবনের চূড়ায় থাকাকালীন ১৯৯৫ সালে হঠাৎই ৩৩ বছর বয়সী জয় মেহতাকে (Jay Mehta) বিয়ে করে নেন ২৮ বছরের জুহি। যদিও বিবাহের পূর্বে তাঁদের প্রেমের সম্পর্কে জানত না কেউই। জয়ের এটা ছিল দ্বিতীয় বিবাহ, স্বাভাবিকভাবেই জুহি-জয়ের সম্পর্ককে লক্ষ্য করে লোকসমাজ থেকে আসতে থাকে তির্যক মন্তব্য ও নানা কটূক্তি।
লুকিয়ে বিয়ে করলেও চাপা থাকে না জুহি-জয়ের বিবাহের কথা। প্রকাশ পায় নবযুগলের ছবি। আর তারপর থেকেই জয়ের স্বল্প চুল ও গায়ের রংকে ব্যঙ্গ করতে থাকেন সকলে। অনেকে জয়কে ‘বুড়ো’-ও বলেন। পাশাপাশি জুহি যে নিছক টাকার লোভেই বিয়ে সেরেছেন, সেরকম অভিযোগও তোলেন অনেকে। যদিও কিরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছেন এই যুগল, সে সম্পর্কে কাউকেই জানাননি তাঁরা।
মুম্বইয়ের মেহতা গ্রূপের মালিক হলেন জয় মেহতা। চিনি থেকে সিমেন্ট, সকল ক্ষেত্রেই অবদান রয়েছে জয়ের। সূত্রের খবর, জয় মেহতার প্রথম স্ত্রী যশ বিড়লার বোন সুজাতা বিড়লা। ১৯৯০ সালে বেঙ্গালুরুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান সুজাতা। স্বভাবতই মারাত্মক ভেঙে পড়েন জয়। বলিসূত্রের খবর অনুসারে, নব্বইয়ের দশকে রাকেশ রোশনের (Rakesh Roshan) সৌজন্যে ‘কারোবার’ (Karobar) ছবির সেটে আলাপ হয় জুহি ও জয়ের। শ্যুটিংয়ের প্রায় ৮ বছর পর ২০০০ সালে রুপোলি পর্দায় সে ছবি মুক্তি পেলেও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় সে ছবি, কিন্তু ব্লকবাস্টার হিট হয়ে যায় জুহি-জয়ের প্রেমকাহিনী।
সূত্রের খবর, সুজাতার সঙ্গে বেশ খুশি ছিলেন জয়, পাশাপাশি ভালো বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়ান জুহি চাওলা। কিন্তু সুজাতার অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জয়। সেসময়ে পাশে ছিলেন জুহি। আর এরপরেই ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দু’জনে। নিছক ভালো বন্ধু হিসেবেই বলিমহলে যখন পরিচিত জুহি-জয়, সেইসময় একে-অপরের প্রতি এহেন অনুভূতির জোয়ারে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন দু’জনেই। যদিও অবশেষে পরিণতি পায় তাঁদের সম্পর্ক।
যখন ক্রমশ জুহির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন জয়, সেই একইসময়ে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় হঠাৎ মাকে হারিয়ে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। একইভাবে জুহিকে সামলান জয়। জুহি-জয়ের ঘনিষ্ঠদের মতে, লাগাতার কঠিন সময়ের মাঝে একে-অপরের সঙ্গে ছিলেন তাঁরা, স্বাভাবিকভাবেই অটুট হয়ে ওঠে তাঁদের সম্পর্ক। আর তাই অবশেষে ১৯৯৫ সালে গোপনে বিয়ে সেরে ফেলেন জুহি ও জয়।
বিয়ের পর থেকে আজও একে-অপরের ছায়াসঙ্গী জুহি ও জয়। যদিও বিয়ের আগে থেকে যে দুঃখের বাতাবরণের মধ্য দিয়ে তাঁরা গেছেন, বিয়ের পরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। ২০০২ সাল নাগাদ জুহির বোন সোনিয়া (Sonia) কর্কট রোগে (Cancer) মারা যান। পাশাপাশি ২০১০-এ স্ট্রোক হওয়ার পর ২০১৪ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জুহির ভাই ববি চাওলা (Bobby Chawla)। মিষ্টি হাসির অন্তরালে যে এত কষ্টের সমাহার, প্রাণবন্ত ও সদা উছ্বল জুহিকে দেখে তা আন্দাজ করাও কঠিন।
জুহি-জয়ের জীবনে খুশির বাতাস নিয়ে আসে মেয়ে জাহ্নবী (Jahnavi) ও ছেলে অর্জুন (Arjun)। জুহি-জয়ের জুটি নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, যেভাবে কঠিন পাথুরে পথে তাঁদের সম্পর্ক এগিয়েছে, তাতে কঠিন হয়েছে তাঁদের বন্ধন। বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে পা রেখে বাঁচার নামই যে জীবন, তা যেন মনে করিয়ে দেয় জুহি-জয়ের প্রেমকাহিনী।