পুরুষ সমাজে একটা কথা বেশ চল রয়েছে। ‘মুছে নেহি তো মর্দ নেহি’ অর্থাৎ গোঁফ (Musatche) নেই তো পুরুষ কিসের। অনেকে আবার মজা করে বলেন, গোঁফের আমি গোঁফের তুমি গোঁফ দিয়ে যায় চেনা। তা সে যায় হোক, পুরুষমানুষদের গোঁফ কিন্তু বেশ ভালোই লাগে। অনেকেই অবশ্য আছেন যাঁরা গোঁফ খুব একটা পছন্দ করেননা। আবার অনেকেই আছেন বেশ পেল্লাই গোফ রাখতে পছন্দ করেন। তা সে মানুষের গোঁফ না হয় হল, কিন্তু পাখির গোঁফ (Bird with Mustache)!
কি মশাই অবাক হলেন নাকি! ভাবছেন হয়তো আজগুবি গল্প, তবে না ব্যাপারটা কিন্তু সিরিয়াস। আসলে আমাদের পৃথিবী বড়োই বিচিত্র, বহু প্রজাতির অসংখ্য পশুপাখি রয়েছে এই পৃথিবীতে। তাঁর মধ্যে খুব কমই আমাদের চেনা। তাই চেনা জানার বাইরেও যে কিছু থাকতে পারে বা হতে পারে তা ঠিক বুঝতে একটু সময় লাগে। এখত্রেও ব্যাপারটা খানিকটা সেই রখমই। কারণ গোঁফওয়ালা পাখি কিন্তু এই পৃথিবীতেই আছে।
গোফ যুক্ত এই পাখিটির নাম হল ইনকা টার্ন (Inca Tern)। মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় দেখতে পাওয়া যায় এই পাখিটিকে। পাখিটির নামেরও একটা বিশেষত্ব রয়েছে। ‘ইনকা’ নামের এক সভ্যতা এই পৃথিবীতে ছিল এক সময়। হয়তো সেই ইনকা সভ্যতার সময়কার পাখি এই ইনকা টার্ন। বিশেষ প্রজাতির এই পাখিটির মুখের মধ্যে রয়েছে সাদা ধবধবে সুন্দর একটা গোঁফ। যা দূর থেকে দেখলে হয়তো মানুষের থেকেও সুন্দর দেখতে লাগে।
আসলে পাখিটির দুটি ঠোঁটের মাঝ বরাবর চোখের পাশ দিয়ে সাদা গোফের মত আঁকা। আর আমাদের সমাজের মত গোঁফ নিয়ে ভারী দম্ভ এই পাখিদের। পুরুষ হোক বা মহিলা উভয় পাখিদেরই এই গোঁফ থাকে। তবে, যার গোঁফ যত বেশী লম্বা ও সুন্দর সেই হল তত শক্তিশালী। এক থাকা মোটে পছন্দ নয় এই প্রজাতির পাখিদের একসাথেই ঘুরে বেড়ায় সর্বদা।
গোঁফওয়ালা এই পাখির গাঢ় লাল রঙের ঠোঁট ও পাও দেখা যায়। এরা মূলত দক্ষিণ আমেরিকার (South America) সমুদ্রের পশ্চিমি উপকূলে বসবাস করে। খাবার হিসাবে সমুদ্রের ছোট মাছই ভরসা। তবে, মানুষের চাহিদার শেষ নেই! মাছ ধরার জন্য উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবহার করেন স্থানীয় জেলেরা। আর এর জেরেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এই পাখিদের। বলতে গেলে একপ্রকার বিপন্ন পাখির এই বিশেষ প্রজাতি। স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে পাখিদের খাবারের সংকট কিছুটা মেটানো গিয়েছে। তবে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে, যাতে সুন্দর এই পাখি আমাদের পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়।