ছেলেবেলায় পোলিও (Polio) আক্রান্ত হয়ে প্যারালাইসিস তারপর দীর্ঘ আটষট্টিটা বছর লোহার ফুসফুস (Iron Lungs) নিয়ে বেঁচে রয়েছেন পল আলেকজান্ডার। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যিনি, লোহার ফুসফুস নিয়ে আজও জীবন্ত। শৈশবের কথা ভাবলে আঁতকে ওঠেন পল। দিন কয়েক আগেই আমরা করোনার ভয়াবহতা দেখেছি। সালটা ১৯৫২, এর থেকেও কয়েকগুণ ভয়াবহ ভাইরাস পোলিওমায়েলাইটিসের আতঙ্কে তখন কাঁপছে গোটা আমেরিকা। তখনও আবিষ্কার হয়নি পোলিওর টিকা। ভাইরাসের দাপটে সে বছর পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৫৮০০০ শিশু।
আর এই ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাননি পল-ও।
পলের অবস্থা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন তার পরিবারের লোক। হাসপাতাল উপচে পড়ছে রোগীতে, রোজ বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। কিন্তু অন্যদিকে ক্রমেই অবনতি ঘটছে পলের স্বাস্থ্যের। হাত পা অসার হয়ে আসছিল তার, মুখের রঙ নীলচে, চোখ ঘোলাটে। পলের মা-বাবা ধরেই নিয়েছিলেন হাতের উপরেই বোধহয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে পল। ছেড়ে দিয়েছিলেন সমস্ত আশাই৷

এমতাবস্থায় এক তরুণ চিকিৎসক ৬ বছরের পলের জীবনে যেন ত্রাতা হয়ে এলেন। তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হল সিলিন্ডার আকৃতির প্রকান্ড এক মেশিনের ভিতর, যে মেশিনটি ফুসফুসের কাজ করে। মেশিনটিকে বলা হত ‘আয়রন লাং’, বা লোহার ফুসফুস। এই মেশিনটির আবিষ্কারক ফিলিপ ড্রিঙ্কার নামক এক ইঞ্জিনিয়ার। সেই ৬ বছর এই ফুসফুসের সাহায্যেই বেঁচে রয়েছেন পল।

আয়রন লাং’, বাংলায় বললে লোহার ফুসফুস। মেকানিকাল রেসপিরেটর যন্ত্রের প্রথম দিককার একটি মডেল। বিশাল বড়ো লোহার খাঁচাটাকে দেখলে আজকের ছিমছাম ভেন্টিলেটর রূপটিকে কল্পনা করা খানিক মুশকিলই হবে। ডাক্তারি পরিভাষায় এটি ‘নেগেটিভ প্রেশার ভেন্টিলেটর’। ১৮৩২ সালে সবার প্রথমে এমন ভেন্টিলেটরের কথা সামনে আনেন স্কটিশ ডাক্তার জন ডালজিয়েল। কৃত্রিমভাবে ফুসফুসের ওপর চাপ তৈরি করে তার কার্যক্ষমতাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, এটাই ছিল আসল লক্ষ্য। মূলত পোলিও-র চিকিৎসায় এর ব্যবহার করা হত।
ভেন্টিলেটর আবিষ্কার হওয়ার আগে এই আইরন লাং নিয়ে বেঁচে থাকা পৃথিবীর সর্বশেষ ব্যক্তি পল।এমনভাবে বেঁচে থাকা বোধহয় মৃত্যুর চেয়েও বেশি কঠিন। কিন্তু পল হাল ছাড়েননি এভাবেই চালিয়ে গিয়েছেন আইনের পড়াশোনা। পড়েছেন প্রেমেও। অবশেষে তার কাছের বন্ধু ক্যাথি এসে শক্ত করে হাত ধরলেন পলের। প্রায় দুই দশক এই লোহার ফুসফুসের ভিতরে ঢুকে থাকা মানুষটার সঙ্গেই কাটিয়ে দিলেন ক্যাথি














