বিনোদন জগত মানেই বড়ই বিচিত্র এক জায়গা। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে রাতারাতি যেমন সাধারণ মানুষও তারকা হয়ে যেতে পারে তেমনি কালের নিয়মে জনপ্রিয়তা খুইয়ে আবার নিঃস্বও হয়ে যেতে পারেন অনেকেই। বিনোদন দুনিয়ায় এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। প্রতিযোগিতায় টিকতে না বাড়লে এখানে কালের নিয়মে হারিয়ে যায় অনেকেই। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির এমনই একজন গায়ক (Singer) হলেন আলতাফ রাজা (Altaf Raja)।
কাওয়ালী গানের জন্য বিশেষ নাম ডাক করেছিলেন এই গায়ক। কিন্তু তার গাওয়া ‘তিরছি টোপি ওয়ালে’ কিংবা ‘তুম তো ঠেহরে পরদেসি’র মতো গান আজও দারুন জনপ্রিয় বলিউডের সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে। কিন্তু এখন আর হিন্দি সিনেমায় তাঁর গান শুনতে পাওয়া যায় না। দেখতে গেলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে এক প্রকার উধাও হয়ে গিয়েছেন এই গায়ক। কিন্তু কেন আজকের প্রতিবেদনে জানানো হবে সেকথাই ?
নিজের প্রতিভার জোরেই বলিউডে বিপুল নামডাক করলেও একসময় আলতাফ রাজা কাজ করেছিলেন দর্জি হিসাবে। আদতে মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা আলতাফ এর বাবা-মা দুজনেই কাওয়ালী গাইতেন। কিন্তু তারা চাইতেন তাদের একমাত্র ছেলে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করুক। তাই মুম্বাইতে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ে পড়াশোনায় আর মন না বসায় বাড়ি ফিরে আসেন আলতাফ।
সেইসময় পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ না থাকায় তাকে জামাকাপড় সেলাইয়ের কাজ শেখানোর ক্লাসে ভর্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও কোনোভাবেই মন ঠিকছিলো না। তাই মায়ের কাছে গান গাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান আলতাফ। এরপর গান শিখতে শুরু করে দেন তিনি। সেই সাথে মায়ের সঙ্গে কাওয়ালী গানের মঞ্চের সমবেত কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও গান গান তিনি। এরপর থেকে বাবা মায়ের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গানের অনুষ্ঠান করার সুযোগ হয় তাঁর।
পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে তার গানের অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছিল। তাঁর ‘তুম তো ঠেহরে পরদেশী’ গানটি আজও শ্রোতাদের কানে লেগে রয়েছে। এই গানের জন্যই রাতারাতি দেশজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। এক রাতেই নাকি সাত লক্ষ ক্যাসেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। এরপর ধীরে ধীরে সুযোগ পান হিন্দি সিনেমার জগতেও। মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত শপথ সিনেমায় প্রথম গান গেয়েছিলেন তিনি। এরপর ‘তিরছি টোপি ওয়ালে’, ‘চন্ডাল’ এবং যমরাজের মত একাধিক সিনেমায় গান গাইতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে।
তবে আলতাফ রাজাকে বিভিন্ন গানের দৃশ্যে অভিনয় করতেও দেখা যেত। তবে ছবি হিট না হলেও আলতাফের গানগুলো ব্যাপক হিট হয়েছিল তাই সেই সময়। তাই আলতাফের কাছে গান গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয়েরও প্রস্তাব আসে। কিন্তু তিনি ঠিক করেছিলেন তিনি গান গাইবেন ঠিকই তবে অভিনয় করবেন না। আর তিনি অভিনয় করতে চাইতেন না বলে তার কাছে নির্মাতারাও প্রস্তাব পাঠানো বন্ধ করে দেন নির্মাতারা।
সময়ের সাথে সাথে বলিউড সিনেমা গুলিতেও কাওয়ালী গানের ব্যবহার কমে যায়। তাই ধীরে ধীরে বলিউড সিনেমা জগতেও নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলেন আলতাফ। বর্তমানে আলতাফের নিজস্ব একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানেই তিনি নিজের গাওয়া গানের ভিডিও পোস্ট করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান গেয়ে উপার্জন করেন আলতাফ।