বাঙালিদের কাছে সিনেমা বলতে বলিউড বা হলিউডের অনেক আগে রয়েছে বাংলা সিনেমা। আর বাংলা সিনেমার অভিনেতাদের মধ্যে এমন কিছু চরিত্র রয়েছে যাদের বাঙালি আজীবন মনে রাখবে। যেমন ধরুন মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। তাকে চেনার জন্য শুধু নামটাই যথেষ্ট। এই মহানায়ককে কি দারুন ভালোবেসেছিলেন অভিনেত্রী সাবিত্রী চ্যাটার্জী (Sabitri Chatterjee)। আজ তার কথাই বলব আপনাদের। এ যেন এক অনবদ্য প্রেমকাহিনী।
উত্তমকুমারের মতোই ভারতীয় বাংলা ছবিটি জগতে একটি বিশিষ্ট নাম সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৭সালে বাংলাদেশের কুমিল্লার কমলাপুর গ্রামে জন্মে ছিলেন অভিনেত্রী। ছিলেন মা বাবার দশম ও সবচাইতে ছোট কন্যা। এরপর ভারত বিভক্ত হয়ে যায়। পরিবার সহ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসেন ভারতবর্ষের আজকের কলকাতায়। কলকাতায় দিদির বাড়ি টালিগঞ্জের প্রথম আস্তানা। সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান আর অভিনয় জগতে আসার সূত্রপাত।
টালিগঞ্জে আসার পর সংসারের হাল ধরতে অভিনয়ে নামেন সাবিত্রী। বাবা থেকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ঢাকাতেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত এখানে থাকা খাওয়ার জন্য টাকা পাঠাতে পারছিলেন না সাবিত্রীর জন্য। তখন নিজের জীবনে নিজেই লড়াই করে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। খুব ছোট বয়সেই টাকার প্রয়োজনে অভিনয়ে নাম লেখান। সেই সময় নাটকের জন্য নতুন মুখশ্রীর খোঁজে ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। কপালের জোরে পছন্দ হল সাবিত্রীকে, এরপর ‘নতুন ইহুদি’ নামের নাটক দিয়েই শুরু হল অভিনয়ের পথে পথ চলার।
ধীরে ধীরে নাটকের মঞ্চে নিজের দখল বাড়াতে থাকেন। এরপর ১৯৫১ সালে রুপোলি পর্দায় আসার সুযোগ পান। ‘সহযাত্রী’ ছবি দিয়ে হাতে খড়ি হয় রুপোলি পর্দায়। ছবিতে মহানায়ক উত্তমকুমারের সাথে পার্শ্ব নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন সাবিত্রী। প্রথম দেখাতেই হয়তো মন দিয়ে বসেন উত্তম কুমারকে। এরপর একাধিক ছবিতে মহানায়কের সাথে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল – ‘রাতভোর’, ‘নিশিপদ্ম’. ‘ধন্যি মেয়ে’ ইত্যাদি।
মহানায়ক উত্তম কুমারকে যে অভিনেত্রী সাবিত্রী ভালোবেসে ফেলেছিলেন একথা তিনি স্বীকার করেছেন। সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজেকের প্রেমের বিষয়টা অকপটেই স্বীকার করেছিলেন অভিনেত্রী। বলেছিলেন, ‘প্রেম খানিকটা ছিল, তবে বেশির ভাগটাই রটনা’। অনেকে নাকি এটাও রোটিয়েছিল মহানায়ক সাবিত্রীকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে ভাড়া ছিলেন যদিও আসলে কিন্তু তাঁর কিছুই হয়নি।
এরপর অভিনেত্রী জানান, অভিনেত্রীর বহুবার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন মহানায়ক। হয়তো পজেসিভ ছিলেন সাবিত্রীর প্রতি। তবে উত্তম কুমারের সাথে গৌরীদেবীর সংসার ভেঙে যাওয়াতে বড় কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। মহানায়কের প্রতি ভালোবাসাটা দিনে দিনে গাঢ় হয়েছিল। তাই তো আশির দশকে যখন মহানায়ক মারা গেলে তখন একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। অভিনয় কমিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে অভিনয়ের পর্দায় অভিনেত্রীকে দেখা যায় ঠিকই তবে সেভাবে কাজের সাথে আর যুক্ত নেই তিনি।