কথায় আছে জহুরী জহর চেনে! ঠিক এমনটাই ঘটেছিল জয়া ভাদুড়ীর (Joya Bhaduri) ক্ষেত্রেও। ১৯৬২ সালে পুরীতে তপন সিংহ পরিচালিত সিনেমা ‘নির্জন সৈকতে’র শুটিং করতে গিয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর আর রবি ঘোষ (Sharmila Thakur & Robi Ghosh)। সেখানেই বাবা তরুণ ভাদুড়ির সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন বছর ১৫-র জয়া ভাদুড়ী।
সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকেই তিনি নজরে পড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর এবং কিংবদন্তি অভিনেতা রবি ঘোষের। সেই শুরু, তাঁদের সুপারিশেই জয়া ভাদুড়ি প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলার তথা বিশ্ব বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘মহানগর’-এ (Mahanagar) অভিনয় করার।
প্রিয় মানিক কাকার এই সিনেমার হাত ধরেই মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অভিনয় জগতে হাতেখড়ি হয়েছিল জয়া ভাদুড়ির। এরপর বাকিটা ইতিহাস। মহানগর সিনেমার হাত ধরেই প্রথম কিশোরী জয়াকে সেলুলয়েডের পর্দায় দেখেছিলেন বাংলার দর্শক। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ট্রিলজি গুলির মধ্যে অন্যতম হল মহানগর।
এই সিনেমার প্রথমেই একটি দৃশ্যে প্রাণোচ্ছল ছোট্ট বাণীকে দেখা গিয়েছিল সিনেমা নিয়ে কথা বলতে। বৌদির সিনেমায় নাম নিয়ে বিরাট উৎসাহ দেখা গিয়েছিল তাঁর চোখে মুখে। এই দৃশ্যে তিনি স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা অনিল চ্যাটার্জী এবং সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম প্রিয় অভিনেত্রী মাধবী মুখ্যোপাধ্যায়ের সাথে।
স্টেটসম্যান খবরের কাগজ দেখে বাণীর প্রশ্ন ছিল সিনেমা যাচ্ছ? তার পর মুখ গোমড়া করে বলে- আর মাস দুয়েক পরে গেলে হত না! বউদি তখন চুপি চুপি জানায় যে তার জন্য একটা চাকরি খোঁজা হচ্ছে। এরপরেই দেখা যায় বাণী আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে তাঁর বউদির জন্য একমাত্র ঠিকঠাক কাজ ফিল্মস্টার হওয়া। চোখে কালো চশমা, ঠোঁটে লিপস্টিক, ব্যাস। এরপরেই স্বপ্নের দুনিয়ার হারিয়ে যায় সে।
এমনকি সে ভাবতে থাকে বউদি হিন্দি ছবিতে কাজ করলে তারা প্লেনে করে মুম্বই যাবে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে একসময় সিনেমার সংলাপের মধ্যে দিয়ে সেদিন যে যে স্বপ্ন গুলো নিজের বউদির জন্য দেখেছিল ছোট্ট বাণী একদিন তা সত্যি হয়ে ধরা দেয় বাস্তবে তাঁর নিজের জীবনে। একের পর এক উপহার দিয়েছেন একাধিক হিট সিনেমা। তাই একসময় তাঁকে দেখে শাবানা আজমীর মতো দাপুটে অভিনেত্রীও বলেছিলেন ‘শাবানা আজমি- ও যদি অভিনয় করতে পারে, তাহলে যে কেউ পারবে!’