টলিউড (Tollywood) ইন্ডাস্ট্রির এক অত্যন্ত নামী শিল্পী হলেন সুখেন দাস (Sukhen Das)। এই অভিনেতা (Actor)-পরিচালককে (Director) চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তবে অনেকেই জানেন না, এত নামী এক তারকার জীবনও ছিল হাজার উত্থান-পতনে ঘেরা। ভাগ্য যে মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা সত্যিই আগে থেকে জানা অসম্ভব। আর সুখেন দাসের কাহিনী সেই কথাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।
কলকাতার একটি বনেদি পরিবারে জন্ম সুখেনের। বউবাজারের শ্রীনাথ দাস লেনের নাম অনেকেই শুনেছেন। এই শ্রীনাথ ছিলেন সুখের ঠাকুরদা। সুখেনের পিতা ফণীন্দ্রনাথ দাস নাট্য প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এই ভালোবাসাই তাঁকে পথে বসেয়েছিল। বনেদি বাড়ির ছেলে হলেও, তাঁর সংসার ছেয়ে গিয়েছিল দারিদ্র্যে। এই ধাক্কাই সামলাতে পারেননি ফণীন্দ্রনাথবাবু। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
স্বামীর মৃত্যুর কিছু সময় পরেই প্রয়াত হন ফণীন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী তথা সুখেনের মা। সেই সময় সুখেন সহ তাঁর সকল ভাইবোনই খুব ছোট। তাঁদের দেখার মতো কেউ ছিল না বলে সবার ঠাঁই হয়েছিল অনাথ আশ্রমে। এত কম বয়সেই এক চিকিৎসকের বাড়িতে কাজ শুরু করেন সুখেন। সেই চিকিৎসকের ডিসপেন্সারি সাফ করা থেকে শুরু করে বাড়ির সকল কাজ করতে হতো তাঁকে। তবে এত কষ্টের মাঝেও অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন কখনও নিজের মন থেকে মুছে যেতে দেননি তিনি।
সুখেন এরপর স্টুডিওপাড়ায় ঘোরাফেরা করতে শুরু করেন। তবে শুরুর দিকে তাঁকে কেউ তেমন পাত্তা দিতেন না। কিন্তু হার মানার পাত্র ছিলেন না সুখেন। কাজ না পেলেও রোজ স্টুডিওপাড়ায় যেতেন তিনি। এরপরই একদিন নামী নাট্যকার তথা সিনেমা পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের চোখ পড়ে যায় তাঁর ওপর। মাত্র ১১ বছর বয়সেই ‘দাসীপুত্র’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন সুখেন।
এরপর ‘কুয়াশা’, ‘সিংহ দুয়ার’, ‘জীবন মরণ’, ‘হীরে চুনি’, ‘দাদামণি’, ‘প্রতিশোধ’, ‘স্বর্ণমহল’ সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন সুখেন। অস্কার জয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পর্যন্ত তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। নিজের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সমৃদ্ধ করেছেন সুখেন।
ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করেছিলেন সুখেন। সেই জন্য নিজের ইউনিটের সকলের ভালোমন্দের দিকে কড়া নজর থাকতো তাঁর। তাঁর কন্যা পিয়া সেনগুপ্ত টলিউডের বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করেছেন। এই মুহূর্তে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স তথা ইম্পার মাথা তিনি। অপরদিকে পিয়ার পুত্র তথা সুখেনের নাতি বনি সেনগুপ্ত টলিউডের নামী অভিনেতা।