বাংলা ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) প্রথম সারির প্রতিভাবান অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম তাপস পাল (Tapas Paul)। সাবলীল অভিনয় গুনেই তিনি মন জয় করে নিয়েছিলেন আপামর বাংলার সিনেমা (Bengali Cinema) প্রেমীদের। তাই মৃত্যুর পরেও আজও সমান প্রাসঙ্গিক তিনি। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তাঁর অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। কথায় আছে মৃত্যুর পরেও শিল্পীরা বেঁচে থাকেন তাঁদের কাজের মধ্যে দিয়ে। বাংলা সিনেমার জগতেও এমনই একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন তাপস পাল।
এমনিতে বছর বছর বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কত অভিনেতাই এল আর গেল তবে তাপস পালের মতো অভিনেতা খুবই কমই রয়েছেন। যিনি নিজের শান্তশিষ্ট স্বভাব আর নিখুঁত অভিনয় দক্ষতার মধ্য দিয়েই ছাপ ফেলেছেন দর্শক মহলে। নিজের সাবলীল অভিনয় গুণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন পাশের বাড়ির ছেলের মত। তবে আজ এই প্রয়াত অভিনেতার অনুরাগীদের কাছে তার স্মৃতিটুকুই সম্বল।
অনেকেই হয়তো জানেন না তাপস পালের অভিনয় জীবনের শুরুটা কিন্তু বেশ মজার ছিল। আদতে চন্দননগরের ছেলে তাপস পাল সেসময় অভিনয় জগতে সেভাবে নাম করতে পারেননি। তখনও রীতিমত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রুপালি পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেতা। তাই অভিনয় করলেও খুবই সাধারণ মানের ছাপোষা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তাপস পাল।
তাছাড়া তখনকার দিনে এখনকার মত সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা সংবাদ মাধ্যমের চাকচিক্য ছিল না। তাই অভিনেতা তাপস পাল অভিনয়ের পাশাপাশি পাড়ার আর পাঁচজন বন্ধুদের সাথে গল্প করে, সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ালেও তখন তাঁকে সেভাবে কেউ চিনে উঠেতে পারেননি। অনেকে চিনতে পারলেও অভিনেতা কখনো নিজে থেকে কারো কাছে ধরা দিতেন না।
তাই বন্ধুরা যখন তাঁর কাছে জানতে চাইতেন তিনি অভিনয় করছেন কিনা হাসিমুখেই অবলীলায় তা অস্বীকার করে যেতেন তাপস পাল। কিন্তু অভিনেতা হওয়ার খ্যাতি বেশিদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেননি তাপস। বিশেষ করে বাংলা সিনেমার অন্যতম কালজয়ী সিনেমা ‘দাদার কীর্তি’ পর চারিদিকে সিনেমার পোস্টার পড়ে গিয়েছিল। আর তাতেই সকলের কাছে জানাজানি হয়ে যায় তাপস পালের পরিচয়।
সেই থেকেই ধীরে ধীরে পরিচিতি তৈরি হতে শুরু করে অভিনেতার। কিন্তু আগেই বলেছি অভিনয়ের পাশাপাশি সে সময় পড়াশোনা করতেন তিনি। আর ততদিনে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অভিনেতা তাপস পালের জনপ্রিয়তা। তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় রিকশাতে চেপে, মুখ ঢেকে পরীক্ষা দিতে যেতে হতো তাঁকে। আসলে তখন বাংলা সিনেমা জগতের এই তরুণ অভিনেতা ছিলেন তখনকার দিনের মহিলা অনুরাগীদের নতুন ভালোবাসা, নতুন ক্রাশ।
তবে দুঃখের বিষয় প্রতিভাবান এই শিল্পী আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা। প্রসঙ্গত শেষ বয়সে এসে সময়টা খুব একটা ভালো কাটেনি অভিনেতার। নিজের করা একটা বেফাঁস মন্তব্যের ফল ভুগতে হয়েছিল আজীবন। এমনকি মৃত্যুর পরেও এখনও তাঁর করা সেই মন্তব্য নিয়ে কম চর্চা হয় না।